ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক নির্যাতন, ছাড়া পেয়ে বর্ণনা দিলেন ডাচ কর্মীরা

গাজার অবৈধ অবরোধ ভাঙতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া নেদারল্যান্ডসের কর্মীরা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। আমস্টারডামে পৌঁছে তারা ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

স্পেনে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় চারজন ডাচ কর্মী মাদ্রিদ হয়ে আমস্টারডামের স্কিপোল বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে রুস ইকেমা নামের একজন কর্মী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলি সেনারা আমাদের অপহরণ করে। আমরা যখন আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিলাম, তখন তারা আমাদের নৌকায় প্রবেশ করে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গাজার অবৈধ অবরোধ ভেঙে সেখানে একটি মানবিক সীমান্ত প্রতিষ্ঠা করা।’

রুস ইকেমা জানান, চারজন সেনা তাদের নৌকায় উঠে তাদের সামনে বসতে বাধ্য করে এবং পরে ইসরায়েলে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের রোদের মধ্যে ফেলে রেখেছিল। খাবার ও পানি ছাড়া রাখা হয়েছিল। ওষুধ দিতেও অস্বীকার করে। কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এখন আমরাই প্রথম কয়েকজনের মধ্যে, যাদের ইসরায়েল থেকে নেদারল্যান্ডসে ফেরত পাঠানো হলো।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি আশা করেছিলাম আমরা অবরোধ ভাঙতে পারব, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আরও নৌকা যাবে এবং ফিলিস্তিন মুক্ত হবে।’

‘আরও জাহাজ ও মানুষ নিয়ে আমরা ফিরব’

মোহাম্মদ আবু নাসের নামের আরেক কর্মী জানান, আটকের সময় তাদের সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর আচরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ এই ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং প্রথম দুই দিন পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরে যে খাবার দেওয়া হতো, তাও ছিল অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত।

তার অভিযোগ, তাদের বাইরে সূর্যের আলোতে হাঁটতে বা আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। আবু নাসের বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে যাদের ওষুধ প্রয়োজন ছিল, তাদেরও সেই সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়।’ তিনি জানান, কয়েকজন বন্দির ইনসুলিন প্রয়োজন ছিল। ১৬টি কারাকক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো সাড়া মেলেনি, যা একজন অংশগ্রহণকারীর জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিল।

আবু নাসের বর্ণবাদী আচরণেরও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে। অশ্বেতাঙ্গ এবং মুসলিম বা আরব বংশোদ্ভূতদের কোনো কারণ ছাড়াই তাদের কারাকক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতো। আমরা জানতাম না তারা কখন বা কোথায় ফিরবে।’ তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের পাসপোর্টধারী কর্মীদের সঙ্গেও খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়। তাদের কয়েকজনের হাত পেছন দিকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং চোখও বেঁধে দেওয়া হয়।

আবু নাসের জানান, তাদের অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতিতে পরিবহন করা হয়। ছোট বাসে গাদাগাদি করে বসিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তাপমাত্রা চরমভাবে কমানো বা বাড়ানো হতো। তিনি বলেন, ‘একই সময়ে আপনার চোখ ও নাকও এমনভাবে ঢাকা থাকত যে ঠিকমতো নিশ্বাস নেওয়া যেত না। একপর্যায়ে মনে হতো আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না, আমি মারা যাব।’

তবে শেষে তিনি ইসরায়েলি কারা প্রহরী, সরকার এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে একটি বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও জাহাজ ও আরও মানুষ নিয়ে ফিরে আসব এবং অবরোধ ভাঙার এই প্রচেষ্টা আমরা থামাব না।’