ইউনিসেফ: গাজায় প্রতি ১৭ মিনিটে এক শিশু নিহত বা পঙ্গু হচ্ছে

গাজা যুদ্ধে নিরীহ শিশুদের যে ভয়াবহ মূল্য দিতে হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে প্রতি ১৭ মিনিটে গড়ে একজন শিশু নিহত অথবা পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে। এই অগ্রহণযোগ্য ও বিস্ময়কর পরিস্থিতি বন্ধ করতে ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস এই তথ্য তুলে ধরেন। গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘শিশুরা তীব্র শারীরিক ও মানসিক আঘাত সহ্য করছে। তারা এতিম হচ্ছে, বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এমন ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছে, যা কোনো শিশুকে যেন কখনো দেখতে না হয়।’

ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা জানান, গাজায় সংঘাত অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টাকে তারা স্বাগত জানায়। তবে, শান্তি আলোচনা চলমান থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২০ দফার একটি শান্তি প্রস্তাব দেন, যাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি, যুদ্ধবিরতি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। হামাস এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর পর সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে মিশরের শারম আল-শেখে উভয় পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে।

এদিকে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের বাধাদানের বিষয়ে ইউনিসেফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাইরেস বলেন, অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য অত্যন্ত জরুরি ইনকিউবেটর এবং ভেন্টিলেটরের মতো সরঞ্জামও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা বেঁচে থাকার জন্য শিশুদের অক্সিজেন মাস্ক ভাগাভাগি করে ব্যবহারের কথা শুনেছি। গাজায় এখন প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন অকালে জন্মগ্রহণ করছে।’

পাইরেস আরও সতর্ক করে বলেন, গাজায় শিশু অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গত দুই মাসে ১০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং শুধু গাজা শহরেই বর্তমানে ২ হাজার ৪০০ শিশু তীব্র অপুষ্টির জন্য চিকিৎসা নিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই বছর ধরে চলা এই সংঘাতে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।