আফগানিস্তান: ‘বাস্তবসম্মত সহযোগিতা’ চাই , বিদেশি ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ নেই

আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি কাবুলের সঙ্গে ‘বাস্তবসম্মত সহযোগিতায়’ এগিয়ে আসতে আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানের মাটি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে না দেওয়ার ব্যাপারেও আশ্বাস দেন।

মঙ্গলবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান বিষয়ক ‘মস্কো ফরম্যাট’ পরামর্শমূলক বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। এটি ছিল সপ্তম মস্কো ফরম্যাট বৈঠক, যেখানে আফগানিস্তান, রাশিয়া, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, চীন, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের কর্মকর্তারা আফগানিস্তান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অংশ নেন। এই প্রথমবার মুত্তাকি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বৈঠকে যোগ দিলেন।

বৈঠকে মুত্তাকি বলেন, ‘আমি আপনাদের আফগান বিষয়টিকে একটি স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে এবং বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আফগান সরকারের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।’

চলতি বছরের জুলাই মাসে রাশিয়া তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় তিনি প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্যান্য দেশগুলোও মস্কো ফরম্যাট এবং এই ধরনের মঞ্চ ব্যবহার করে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাস্তবসম্মত সহযোগিতার দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তির অধীনে ২০২১ সালের আগস্টে বিদেশি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের পর তালেবান কাবুলে ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে শুধুমাত্র মস্কোই তালেবান নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আফগানিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি দেশের যৌথ বিবৃতিতে প্রকাশিত উদ্বেগের জবাবে মুত্তাকি বলেন, তার দেশের মাটিতে এমন কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আফগানিস্তানে এমন কোনো গোষ্ঠী নেই যারা আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করে।’ তবে তিনি আরও জানান, আফগান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে যে আইএস (দায়েশ) এবং অন্যান্য গোষ্ঠী সম্প্রতি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা আফগান সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

মুত্তাকি এই অঞ্চল থেকে মাদক নির্মূলের জন্য একটি সমন্বিত আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি উপস্থিতিকে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলোর ‘প্রধান’ কারণ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে নিরাপত্তাহীনতায় অবদান রাখা সমস্ত কারণ দূর করা হয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলাপকালে মুত্তাকি জানান, তার দেশ আফগানিস্তানে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেবে না। আফগানিস্তান বিষয়ক রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জমির কাবুলভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসকে জানান, আফগান শীর্ষ কূটনীতিক দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে আফগানিস্তান এবং তার সরকার নিজেদের ভূখণ্ডে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেবে না, যার মধ্যে বাগরাম ঘাঁটিও রয়েছে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তর্বর্তীকালীন তালেবান প্রশাসনকে বাগরাম বিমানঘাঁটি পেন্টাগনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করার পর চীন, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান আফগানিস্তানে পুনরায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে।

মস্কো ফরম্যাটের বৈঠকে আফগানিস্তান বিষয়ক পাকিস্তানের বিশেষ দূত মোহাম্মদ সাদিক একটি ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ আফগানিস্তানের’ প্রতি ইসলামাবাদের ‘অবিচল’ প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি জানান, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে এবং আফগানিস্তানের মাটি থেকে পরিচালিত সমস্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছে।