গাজা টাস্ক ফোর্সে যোগ দিতে প্রস্তুত তুরস্ক

গাজা টাস্ক ফোর্সের অংশ হিসেবে যেকোনো দায়িত্ব পালনে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তুর্কি বাহিনী আগেও বিভিন্ন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক অভিযানে অংশ নিয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেকি আকতুর্ক জানান, তুরস্কের সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ অবস্থান সব পক্ষের কাছেই সম্মান অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে আকতুর্ক বলেন, গত দুই বছর ধরে মারাত্মক মানবিক সংকটে থাকা এই অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি এই যুদ্ধবিরতি একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে এবং চূড়ান্তভাবে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।’

এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সিরিয়া পরিস্থিতি

সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, তুরস্ক সেদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনকে দেশটির ঐক্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তারা জানায়, মানবিজ ও আলেপ্পোর গ্রামীণ এলাকায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর ওয়াইপিজি/এসডিজি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা প্রমাণ করে যে তারা ২০২৫ সালের ১০ মার্চের চুক্তি মানতে ব্যর্থ হয়েছে এবং শান্তির জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, সিরীয় সরকার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির মধ্যকার যোগাযোগের ওপর তুরস্ক নিবিড় নজর রাখছে এবং সিরিয়ার ‘এক রাষ্ট্র, এক সেনাবাহিনী’ নীতির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

বিমানবাহিনীকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ

ইউরোফাইটার যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে চলমান প্রচেষ্টা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তুরস্কের নিজস্ব জাতীয় যুদ্ধবিমান ‘কান’ বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং চুক্তি অনুমোদনের পর্যায়ে পৌঁছালে জনগণকে জানানো হবে। তাই শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বিবৃতির ওপর নির্ভর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাঠামো থেকে তুরস্ককে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে সূত্রগুলো জানায়, ২০২৫ সালের ২৭ মের একটি প্রবিধান অ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্যদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারা জোর দিয়ে জানায়, ইউরোপের নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্তির ওপর নির্ভরশীল এবং তুরস্ক ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে এই কাঠামোর ভেতরে ও বাইরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

আন্তর্জাতিক অভিযান ও সন্ত্রাস দমন

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দুই সন্দেহভাজন সন্ত্রাসিসহ ২৯৪ জনকে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টাকালে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মোট আটককৃতের সংখ্যা ৭,৪৭২ জনে দাঁড়িয়েছে।

আকতুর্ক জানান, তুর্কি সামরিক বাহিনী স্থল, সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং সাইবার ক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রস্তুতি বজায় রাখতে ও বাড়াতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি আঙ্কারায় ‘তুরস্ক-আলজেরিয়া বিশেষ বাহিনী প্রশিক্ষণ’ এবং হাঙ্গেরিতে ‘অ্যাডাপটিভ হুসার ফিল্ড এক্সারসাইজ’ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার কোনিয়ায় ‘ন্যাশনাল আনাতোলিয়ান ঈগল’, ইস্তাম্বুলে ‘ন্যাটো মেরিটাইম সিকিউরিটি’ এবং রোমানিয়ায় ‘সারমিস কমান্ডো অপারেশন’ ও ‘পসেইডন মাইন অপারেশন’ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ৩ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পসেইডন অনুশীলনে অংশ নেওয়া টিসিজি আমাসরা ‘মাইন কাউন্টারমেজারস ব্ল্যাক সি’ (এমসিএম ব্ল্যাক সি) টাস্ক গ্রুপের সপ্তম সক্রিয়করণে যোগ দিয়েছে এবং ১১-১২ অক্টোবর রোমানিয়ার কনস্টান্টা বন্দর পরিদর্শন করবে।

আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে তুরস্ক-পোল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক এসএটি (সাবমেরিন অ্যাসল্ট) প্রশিক্ষণ, কার্সে ‘ইলদিরিম মোবিলাইজেশন-৫’, আনাতোলিয়ায় ‘ইনডিভিজুয়াল মোবিলাইজেশন ট্রেনিং’ এবং আঙ্কারায় তুরস্ক-সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশেষ বাহিনী প্রশিক্ষণ, যা ১৭ অক্টোবর শেষ হবে। এছাড়া ১৩-১৭ অক্টোবর আজারবাইজানে তুরস্ক-আজারবাইজান দ্বিপাক্ষিক এসএটি-এসএএস (সাবমেরিন ডিফেন্স টিমস) অনুশীলন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি