নির্বাচনী দায়িত্বে ‘নতুন মুখ’, পুরোনোদের রাখছে না সরকার

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নতুন কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা রাখতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা যেন আইনবহির্ভূত কাজে যুক্ত না হন, সে বিষয়েও स्पष्ट নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনী নিরাপত্তা জোরদার করতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং তা কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। সারা দেশে ১৩০টি ভেন্যুতে ২৮টি ব্যাচে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। এর পাশাপাশি, ৫ লাখ ৮৫ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্যকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার সদস্য অস্ত্রসহ এবং সাড়ে ৪ লাখ সদস্য নিরস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়াও নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার ব্যাটালিয়নের ৩ হাজার ১৫৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১ হাজার ১০০টি প্লাটুনে মোট ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যাদের প্রশিক্ষণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় হবে বলে উল্লেখ করেন। ‘সেফ এক্সিট’ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তানেরা দেশেই থাকি, আমার সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই।’ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কিছু চেষ্টা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা নস্যাৎ করা হয়েছে।