মাদাগাস্কারে ক্ষমতার পালাবদল, নাকি অভ্যুত্থান?

মাদাগাস্কারে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর একটি বিদ্রোহী ইউনিট নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা ক্ষমতা দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন। এই ঘটনায় আফ্রিকার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, রোববার (১২ অক্টোবর) সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নেওয়া ‘আর্মি পার্সোনেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেন্টার’ (ক্যাপস্যাট) নামের একটি বিদ্রোহী সেনা ইউনিট জেনারেল ডেমোসথেন পিকুলাসকে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। আন্তানানারিভোতে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মানান্টসোয়া রাকোতোারিভেলো উপস্থিত থেকে বলেন, ‘আমি পিকুলাসকে আমার আশীর্বাদ দিচ্ছি।’ এই ক্যাপস্যাট ইউনিটটিই ২০০৯ সালে আন্দ্রি রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনতে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

এর আগে শনিবার সরকারবিরোধী তরুণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাপস্যাট। পরদিন সকালে এক ভিডিও বার্তায় তারা ঘোষণা করে, ‘এখন থেকে স্থল, নৌ ও আকাশপথে মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর সকল আদেশ ক্যাপস্যাট সদর দপ্তর থেকে জারি করা হবে।’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অজ্ঞাত শক্তি অবৈধভাবে ও জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

এদিকে, দায়িত্ব গ্রহণের পর জেনারেল পিকুলাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি অপ্রত্যাশিত হলেও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।’ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সামরিক স্থাপনার ভেতরে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হননি।

ক্যাপস্যাটের কর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তাদের সহকর্মীদের প্রতি ‘অবৈধ আদেশ’ না মানার আহ্বান জানিয়েছেন। ভিডিওতে ইউনিটের কয়েকজন সদস্য বলেন, ‘আমরা চাটুকার হয়ে গেছি। আমরা জনগণ এবং তাদের সম্পত্তি রক্ষা করার পরিবর্তে আদেশ মেনে চলা, এমনকি অবৈধ আদেশগুলোও বাস্তবায়ন করা বেছে নিয়েছি।’ তারা আরও বলেন, ‘যারা আপনাকে আপনার সহযোদ্ধাদের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেয়, তাদের দিকে অস্ত্র তাক করুন।’

তবে ক্যাপস্যাটের কর্নেল মাইকেল রান্ড্রিয়ানিরিনা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তার ইউনিটের এই সিদ্ধান্ত কোনো অভ্যুত্থান নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি, তবে এটি অভ্যুত্থান ছিল না।’

এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রুফিন ফর্তুনাত জাফিসাম্বো জানিয়েছেন, সরকার সকল পক্ষের সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, মাদাগাস্কারের সিনেট এক বিবৃতিতে তাদের প্রেসিডেন্ট জেনারেল রিচার্ড রাভালোমানানাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে, যা রাজনৈতিক সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।