ট্রাম্পের ঘোষণা, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে

গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতি বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা করার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

রবিবার মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে তেল আবিবের উদ্দেশে যাত্রা করার পর সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ, ঠিক আছে? আপনারা কি এটা বুঝতে পারছেন?’ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংঘাতের সমাপ্তি স্বীকার না করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

গত বুধবার ট্রাম্পের ঘোষিত ২০-দফা প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি টিকে থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি জানান, ‘এটি টিকে থাকার অনেক কারণ রয়েছে। আমার মনে হয়, মানুষ এতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এটি শুধু সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলছে।’

চুক্তি অনুযায়ী গাজা শাসনের জন্য একটি ‘শান্তি পরিষদ’ গঠনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই এই পরিষদ গঠন করা হবে। তবে এতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তি অনিশ্চিত।

ট্রাম্প আরও জানান, পুনর্গঠন প্রচেষ্টা, বিশেষ করে ধ্বংসস্তূপ ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিষ্কারের প্রক্রিয়া ‘অবিলম্বে’ শুরু হবে এবং এটি কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। তিনি বলেন, ‘আপনাকে প্রথমে মানুষের যত্ন নিতে হবে। তবে এটি সত্যিই অবিলম্বে শুরু হতে যাচ্ছে। তাদের মাটিতে মিশে যাওয়া অনেক কাঠামো অপসারণের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে হবে… এটি বিধ্বস্ত। এটি একটি ধ্বংসযজ্ঞের স্থান। প্রায় পুরোটাই।’

শারম আল-শেখে যুদ্ধবিরতি বিষয়ক শান্তি সম্মেলনের আগে ইসরায়েল ও মিশরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ট্রাম্প এসব মন্তব্য করেন। যাত্রার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবাই এই মুহূর্তটি নিয়ে খুব উত্তেজিত। এই প্রথমবারের মতো সবাই বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত। এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারাটা সম্মানের এবং আমরা একটি দারুণ সময় কাটাতে যাচ্ছি।’

এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হিগসেথ, সিআইএ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন। তারা প্রথমে ইসরায়েল এবং পরে মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী শহর শারম আল-শেখে যাবেন ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করার’ লক্ষ্যে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করতে।

কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি তেল আবিবে অবতরণ করবেন। সেখানে তিনি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং দেশটির সংসদ নেসেটে ভাষণ দেবেন। দুপুর ১টায় তিনি মিশরের উদ্দেশে রওনা হবেন, যেখানে পরিকল্পিত শান্তি সম্মেলনে যোগ দেবেন।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ট্রাম্প শারম আল-শেখে পৌঁছাবেন এবং মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে শারম আল-শেখ শান্তি সম্মেলনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। এই সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস-সহ ২০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মিশরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সম্মেলনের লক্ষ্য ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করা, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন পর্ব শুরু করা।’

ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার ২০-দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পর্যায়ক্রমিক প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাসকে বাদ দিয়ে গাজায় একটি নতুন শাসক निकाय গঠন, একটি বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭,৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই হামলায় উপত্যকাটি বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে।