কার্বন শোষণের বদলে নিঃসরণ করছে অস্ট্রেলিয়ার বন, বিশ্বজুড়ে শঙ্কা

অস্ট্রেলিয়ার ক্রান্তীয় বনভূমিগুলো এখন আর গ্রহের জন্য ক্ষতিকর কার্বন শোষণ করছে না, বরং তা নিঃসরণের উৎসে পরিণত হয়েছে। বুধবার বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

‘অ্যাবভগ্রাউন্ড বায়োমাস ইন অস্ট্রেলিয়ান ট্রপিক্যাল ফরেস্টস নাউ এ নেট কার্বন সোর্স’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার আর্দ্র ক্রান্তীয় বনভূমির ভূপৃষ্ঠস্থ জৈববস্তুর কার্বন শোষণের ক্ষমতা দীর্ঘকাল ধরেই কমছিল। এতে আরও বলা হয়, ‘বনভূমির কাষ্ঠল অংশ ২০০০ সালের দিকে কার্বন শোষকের ভূমিকা থেকে কার্বন উৎসের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়, যদিও মৃত গাছের পচনের কারণে কার্বন নিঃসরণের প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব ঘটেছিল।’ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই রূপান্তর ১৯৯৮ সালের দিকে শুরু হয়েছিল।

ক্রান্তীয় বনভূমিগুলো বিশ্বের প্রধান কার্বন শোষক হিসেবে কাজ করে, যা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নেয়। বৈশ্বিক জলবায়ু মডেলগুলোর পূর্বাভাস ছিল যে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং এসব বনভূমির কার্বন শোষণের ক্ষমতা আরও বাড়বে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বনভূমির ওপর পরিচালিত এই গবেষণা সেই ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গবেষকদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার আর্দ্র ক্রান্তীয় বনভূমির আয়তন তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ জৈববস্তু সমৃদ্ধ বনগুলোর একটি। এই বনের পরিবর্তন মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সূচক। এর মাধ্যমে আমাজন, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিশাল বনভূমিগুলো ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কীরূপ আচরণ করতে পারে, তার একটি পূর্বাভাস পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ফিলিপাইন, মধ্য এশিয়া, মাদাগাস্কার ও মধ্য আমেরিকার ক্রান্তীয় বনভূমিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বৃদ্ধির পরিণতিও এর মাধ্যমে অনুমান করা সম্ভব।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ক্রমবর্ধমান মাত্রা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করছে, যা পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য অন্যতম মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত।