আপনি পড়ছেন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট তীব্র খরা মধ্যপ্রাচ্যের পানি সংকটকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে। এতে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় প্রতি বছর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ছবি - সংগৃহীত

আনাদোলু সংবাদ সংস্থা এবং পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ব্লু পিস মিডল ইস্টের (বিপিএমই) একটি যৌথ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঝড় ও খরা এখন জীবনের নতুন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুসারে, পানি সংকটে থাকা দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে কুয়েত, সাইপ্রাস, ওমান, কাতার এবং বাহরাইন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে জর্ডান ১৫তম, ইরাক ২৩তম এবং তুরস্ক ৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

তুরস্কের পরিবেশ, নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি পানি বছরে (১ অক্টোবর ২০২৩ - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদি গড়ের চেয়ে ৪.১ শতাংশ এবং গত বছরের চেয়ে ১০.৫ শতাংশ বেশি হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তনের কারণে তা কৃষিক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কের মোট ভূমির প্রায় অর্ধেকই, অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি।

তুর্কি পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে শস্য ও পশুখাদ্য ছাড়া অন্যান্য উদ্ভিদভিত্তিক উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কমেছে। শস্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৭.৫ শতাংশ। এর মধ্যে গমের উৎপাদন ৫.৫ শতাংশ, বার্লি ১২ শতাংশ, রাই ১৫.৭ শতাংশ এবং ভুট্টা ১০ শতাংশ কমেছে।

সংকটে জর্ডান ও ইরাক

তুরস্কের মতো জর্ডান ও ইরাকও খরার বিধ্বংসী প্রভাব মোকাবিলা করছে। জর্ডানের মোট ভূমির প্রায় ১০.৪ শতাংশ কৃষিজমি। দেশটিতে মাথাপিছু বার্ষিক নবায়নযোগ্য পানির পরিমাণ ১০০ ঘনমিটারের কম, যা চরম পানি ঘাটতির সংজ্ঞার (মাথাপিছু ৫০০ ঘনমিটার) চেয়ে অনেক নিচে। জর্ডানের পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে গম ও বার্লির উৎপাদন বাড়লেও মসুর ডাল ও অন্যান্য ডাল জাতীয় শস্যের উৎপাদন কমেছে।

অন্যদিকে, ইরাকের মোট ভূমির প্রায় ২১.৭ শতাংশ কৃষিজমি। দেশটি তার পানির চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশের জন্য ফোরাত ও তাইগ্রিস নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুই নদীর পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ১৯৯৩ সালে যেখানে দেশটিতে পানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি ঘনমিটার, তা সম্প্রতি ৯৫০ কোটি ঘনমিটারে নেমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

তুরস্কের ওনডোকুজ মাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কাঠামো ও সেচ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ইউসুফ ডেমির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুরস্কে মরুভূমির প্রভাব দক্ষিণ থেকে উত্তরে সরে আসছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন ঘটছে এবং উষ্ণায়ন বাড়ছে। দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই এখন খরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

জর্ডানের রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটির কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা বিভাগের প্রধান রুবা আজ্জুর জানান, জর্ডানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত হ্রাসই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব। তিনি বলেন, ‘আগে কখনো দেখা যায়নি এমন চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বৃষ্টি নির্ভর কৃষিব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এমইএফ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়েশাগুলে কিবারোগলু আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে ফোরাত নদীর প্রবাহ ২৩ শতাংশ এবং তাইগ্রিস নদীর প্রবাহ ২৮ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে, যা এই অঞ্চলের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ।’

কৃষকের হাহাকার

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট খরার প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করছেন কৃষকেরা। তুরস্কের এদির্নে প্রদেশের হাজিউমুর গ্রামের কৃষক ফেভজি গোকতাস বলেন, ‘অনেক বছর এমন খরা দেখিনি। আগে গ্রীষ্মকালে এত বৃষ্টি হতো যে আমরা মাঠ থেকে টমেটোর মতো ফসল নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা সেগুলো ফলাতে পারছি না। আমরা মারাত্মক খরার সম্মুখীন হচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, বৃষ্টি দেরিতে শুরু হওয়ায় এ বছর গমের ফলন ৩০-৪০ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

আগামী বছরগুলোতে খরা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে—এই আশঙ্কায় দিন কাটছে মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ কৃষকের, যা এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তাকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.