জার্মান চ্যান্সেলর: গাজা পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির আশা জাগাচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে একটি ‘ঐতিহাসিক’ অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির নতুন আশা প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস। বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই পরিকল্পনার প্রতি জার্মানির সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

চ্যান্সেলর মের্ৎস বলেন, ‘সোমবার থেকে এই অঞ্চলে প্রকৃত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য নতুন করে আশা জেগেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করলে কী সম্ভব, তা আমরা দেখেছি।’

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুরস্ক, কাতার ও মিসরের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মের্ৎস সংসদে বলেন, ‘আমি সেইসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এই পরিকল্পনাকে সম্ভব করে তুলতে এবং বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি, কাতারের আমির আল থানি এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।’

রক্ষণশীল এই নেতা আরও বলেন, ‘এই ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে একযোগে কাজ করার ফলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। আমরা সবাই তাদের কাছে ঋণী।’ তার এই বক্তব্যের পর সংসদ সদস্যরা করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেন।

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি শার্ম আল-শেখে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সমর্থন জানাতে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ ও আঞ্চলিক নেতারা একত্রিত হন।

এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপে হামাস ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সরে যেতে শুরু করেছে এবং সেখানে মানবিক সহায়তাও পৌঁছাতে শুরু করেছে। পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, একটি অস্থায়ী প্রযুক্তিবিদ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন।

গত দুই বছর ধরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় এক নৃশংস যুদ্ধ চালিয়েছে, যেখানে প্রায় ৬৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই যুদ্ধে আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।

গত মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছে। সেখানে অবরোধ এবং ত্রাণ প্রবেশে বাধার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, যার ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শত শত ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।