পশ্চিম তীরে ২৪ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার, গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বাড়ি

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এক শিশু ও একজন কর্মকর্তাসহ অন্তত ২৪ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে নির্মাণ অনুমতির অজুহাতে একটি ফিলিস্তিনি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তুলকারেমের দুটি উত্তরাঞ্চলীয় শহর থেকে নয়জন, নাবলুস থেকে দুজন, পূর্বাঞ্চলীয় কালকিলিয়া থেকে তিনজন এবং জেনিন থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া, বেথলেহেম শহর থেকে দুজন এবং হেবরন থেকে এক শিশুসহ আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘কলোনাইজেশন অ্যান্ড ওয়াল রেজিস্ট্যান্স কমিশনের’ পরিচালক মুরাদ আশতিউইকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল বলে কমিশন জানিয়েছে। তবে কিছু সময় পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, মধ্য পশ্চিম তীরের রামাল্লায় নির্মাণ অনুমতির অভাবের অজুহাত দেখিয়ে এক ফিলিস্তিনির বাড়ি ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আল-মুগাইয়ের গ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন আবু আলিয়া আনাদোলুকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের আদেশে আরও ৭০টি বাড়ি ভাঙার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েল প্রায়শই ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ভাঙার জন্য নির্মাণ অনুমতির অভাবের অজুহাত ব্যবহার করে, বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ‘এরিয়া সি’-তে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম তীরকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে ‘এরিয়া সি’ ইসরায়েলের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

হামলা ও সহিংসতা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিম তীরের বিভিন্ন অংশে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসক ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমের উত্তরে কালান্দিয়ায় একজন এবং আল-রাম শহরে আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী কালান্দিয়ার একটি পৃথকীকরণ প্রাচীরের কাছে বাড়িঘরে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, এতে অনেক বাসিন্দা শ্বাসকষ্টে ভোগেন। পিআরসিএস পৃথক এক বিবৃতিতে জানায়, নাবলুস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে চারজন গুলিবিদ্ধ হন এবং একজন ১৫ বছর বয়সি কিশোর শ্রাপনেলের আঘাতে আহত হয়। ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, নাবলুসে আহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু।

ইসরায়েলি বাহিনী শহরের কেন্দ্রে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। শহর থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগে একজন যুবককে গ্রেপ্তার এবং তার গাড়ি জব্দ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী নাবলুস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে অভিযান চালায়। সেখানে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে আটক করে মাঠপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীরা ভাঙচুর হওয়া ভবনের ছবি প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, প্রায় ১০,৩০০ জন আহত এবং ১৬০০ শিশুসহ ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এক ঐতিহাসিক রায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি খালি করার আহ্বান জানায়।