বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে জার্মান পার্লামেন্ট

জার্মানিতে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দেশটির সংসদে একটি আইন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের জোট সরকারের শরিকরা স্বেচ্ছায় যোগদানের সংখ্যা কম হলে লটারির মাধ্যমে সৈন্য নিয়োগের প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার এই বিতর্ক শুরু হয়।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সি পুরুষদের যোগ্যতা, শারীরিক সক্ষমতা এবং দেশের হয়ে কাজ করার ইচ্ছা সম্পর্কে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে হবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, ২০৩৫ সালের মধ্যে ন্যাটোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জার্মানির সৈন্য সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নতুন সৈন্য নিয়োগ দিতে হবে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্যদের জানান, জোট চুক্তি অনুসারে নতুন এই ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে স্বেচ্ছামূলক থাকবে। তিনি আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমেই সামরিক বাহিনীতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তরুণদের জন্য সামরিক সেবাকে আরও আকর্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক করে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমরা আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি যুক্ত করছি। আমরা যোগদানের সময়কাল নমনীয় করছি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত বেতন নিশ্চিত করছি। এই সমন্বিত উদ্যোগ সফল হবে।’

পিস্তোরিয়াস আরও জানান, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর যেকোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিষয়টি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার সঙ্গে জড়িত এবং এটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই এ নিয়ে একটি আদর্শমুক্ত ও খোলামেলা বিতর্ক হওয়া উচিত।

বিতর্কের আগে জোটের রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ ব্লক একটি সংশোধনী প্রস্তাব করে। এতে বলা হয়, স্বেচ্ছায় যোগদানকারী সৈন্যের সংখ্যা অপর্যাপ্ত হলে ‘ডেনিশ মডেল’ অনুসরণ করে লটারির মাধ্যমে তরুণদের বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। রক্ষণশীলরা সতর্ক করে জানায়, শুধু স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর জনবলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা এই সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করে সামরিক সেবাকে স্বেচ্ছামূলক রাখার ওপর জোর দেয়।

সংসদে খসড়া বিলটির ওপর প্রথম দফা বিতর্কের পর পর্যালোচনার জন্য এটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এর আগে একাধিকবার বলেছেন, জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে চায়। রাশিয়া থেকে সৃষ্ট হুমকি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ইউরোপীয় নিরাপত্তায় জার্মানিকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, জার্মানি ২০১১ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা স্থগিত করে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করে। বর্তমানে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী বুন্দেসভেরের সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার।