ফিলিস্তিন পুনর্গঠনে সহায়তার আশ্বাস, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বাড়াতে চায় ইইউ

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ‘গভীর একীকরণ’ প্রসারের লক্ষ্যে একটি নতুন চুক্তি অনুমোদন করেছে ইউরোপীয় কমিশন। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন এই ঘোষণা দেন। এই চুক্তিতে মূলত জনগণ, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা, প্রস্তুতি ও অভিবাসনের মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এক সংবাদ বিবৃতিতে ফন ডার লিয়েন বলিয়েন, ‘আমাদের গভীর একীকরণের জন্য কাজ করা উচিত। পরস্পরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে হবে এবং আমাদের শিল্প, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি করতে হবে।’ তিনি আরও বলিয়েন, ‘এ কারণেই আজ আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে একটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব রাখছি। আসুন, পর্যায়ক্রমিক একীকরণের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন ভূমধ্যসাগরীয় স্থান তৈরি করি।’

ফন ডার লিয়েনের পর, পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কমিশনার দুবরাভকা সুইকা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

কালাস জানান, এই চুক্তির আওতায় ১০০টিরও বেশি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, তরুণদের জন্য উন্নত সুযোগ তৈরি, আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা।

এরপর সুইকা উল্লেখ করেন, চুক্তির প্রথম স্তম্ভের লক্ষ্য হলো শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং যাতায়াতের জন্য অভিন্ন স্থান তৈরির মাধ্যমে জনগণকে ক্ষমতায়ন করা। এর একটি মূল প্রকল্প হলো ভূমধ্যসাগরীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় স্তম্ভের অধীনে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আধুনিকীকরণ করা হবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও সমুদ্র অর্থনীতিতে সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন উদ্যোগকে (স্টার্টআপ) সমর্থন দেওয়া হবে।

সুইকা আরও প্রকাশ করেন যে, তৃতীয় স্তম্ভটি নিরাপত্তা, বিচার এবং অভিবাসন সম্পর্কিত। এর মধ্যে অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, ‘চরমপন্থা’ প্রতিরোধ এবং আইনি পথ, প্রতিভা অংশীদারিত্ব ও শিক্ষার্থী ভিসার মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

‘ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমরা আন্তরিক’

নেতারা ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা এবং পুনর্গঠন, নিরাপত্তা ও শাসনব্যবস্থায় অবদান রাখার মাধ্যমে। সুইকা আশ্বস্ত করে বলিয়েন, ‘ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমরা আন্তরিক।’

কালাস আরও উল্লেখ করেন যে তারা পুনর্গঠন, নিরাপত্তা এবং শাসনব্যবস্থার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। তিনি জোর দিয়ে বলিয়েন, গাজায় একটি টেকসই শান্তির জন্য এখনও অনেক সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলিয়েন, ‘অকল্পনীয় যন্ত্রণা ও ক্ষতির পর গাজার বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটেছে, যা শুধু গাজার জন্য নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বৃহত্তর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই মুহূর্তটি এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নতুন করে লেখার সূচনা করছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ গঠনে ইউরোপের অংশীদারত্ব রয়েছে এবং তারা সহযোগী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে চায়। ফন ডার লিয়েন যোগ করেন, ‘আমাদের অভিন্ন ভূমধ্যসাগরীয় আবাসের প্রতি এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’