পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান জেরির, বিক্ষোভে উত্তাল পেরু, নিহত ১

পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট হোসে জেরি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করছেন না। নতুন প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে চলা ব্যাপক বিক্ষোভ থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠলেও তিনি এ সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। এদিকে, তরুণদের এই বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮০ জন পুলিশ সদস্য এবং ১০ জন সাংবাদিক রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পার্লামেন্ট পরিদর্শনের পর প্রেসিডেন্ট জেরি সাংবাদিকদের জানান, ‘দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই আমার দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতি।’ অপরাধ দমনের জন্য তিনি বিশেষ ক্ষমতা চাইবেন বলেও উল্লেখ করেন।

মূলত তরুণদের জন্য উন্নত পেনশন ও বেতনের দাবিতে মাসখানেক আগে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তবে এটি এখন বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

গত ১০ অক্টোবর জেরি দেশটির সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এরপর থেকেই তার এবং অন্যান্য আইনপ্রণেতার পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজপথে নামে। ডেভিড তাফুর নামের ২৭ বছর বয়সী একজন বিদ্যুৎকর্মী বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি, যারা এখানকার খুনিও বটে।’ তিনি জানান, টিকটকে বিক্ষোভের খবর দেখেই তিনি এতে যোগ দিয়েছেন।

এদিকে, পেরুর কৌঁসুলি কার্যালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বিক্ষোভে নিহত ৩২ বছর বয়সী হিপ-হপ গায়ক এদুয়ার্দো রুইজের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। রুইজের মরদেহ একটি হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে ব্যালিস্টিক আলামত ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি গুলি করার পর রুইজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। গুলি চালানো ব্যক্তি সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পেরুর ন্যায়পাল কার্যালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন বিক্ষোভকারী এবং ৮০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, জাতীয় সাংবাদিক সমিতির তথ্যমতে, ছয়জন সাংবাদিক ছররা গুলিতে আহত এবং আরও চারজন পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জেরি হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, দিনা বলুয়ার্তেকে সংসদ থেকে অপসারণের পর ৩৮ বছর বয়সী হোসে জেরি ক্ষমতায় আসেন। এর আগেও তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এক নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেও আগস্টে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এ ছাড়া, আইনপ্রণেতা হিসেবে জেরি এমন ছয়টি আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যেগুলো বিশেষজ্ঞদের মতে অপরাধ দমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বিক্ষোভকারীরা এসব আইন বাতিলেরও দাবি জানাচ্ছে।

জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট জেরি ক্ষমতায় এসে সাবেক বিচারক এরনেস্তো আলভারেজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমান বিক্ষোভ নিয়ে আলভারেজ কোনো মন্তব্য না করলেও, এর আগে তিনি তরুণ বিক্ষোভকারীদের ‘দুর্বৃত্ত দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই তরুণেরা ঝড়ের মতো এসে গণতন্ত্র দখল করতে চায় এবং পড়াশোনা ও কাজ করা সত্যিকারের যুবসমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না।

পেরুর সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। সমাজবিজ্ঞানী ওমর করোনেল বলেন, ‘পেনশনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন নিরাপত্তাহীনতা, রাষ্ট্রীয় অকার্যকারিতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।’ পেরুর এই প্রতিবাদকে বিশ্বজুড়ে নতুন প্রজন্মের সরকারবিরোধী ক্ষোভের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া এবং মরক্কোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।