ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অঙ্গচুরির অভিযোগ, আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান

ফিলিস্তিনিদের মরদেহ থেকে অঙ্গচুরির মতো ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছে গাজার কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে এমন বর্বরোচিত অপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে তারা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েলের হস্তান্তর করা মরদেহগুলো পাওয়ার পর এই অভিযোগ সামনে আসে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল থাওয়াবতা শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জানান, গত তিন দিনে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী ১২০টি মরদেহ হস্তান্তর করেছে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ মরদেহই ভয়াবহ অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে ওই ব্যক্তিরা পরিকল্পিত হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

থাওয়াবতা আরও বলেন, ‘অনেক মরদেহের চোখ, কর্নিয়া ও অন্যান্য অঙ্গ অনুপস্থিত ছিল, যা নিশ্চিত করে যে ইসরায়েলি সেনারা মরদেহ আটকে রেখে তাদের অঙ্গচুরি করেছে।’ তিনি এটিকে একটি বর্বর অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, ফেরত দেওয়া অনেক মরদেহ চোখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। এমনকি কয়েকটির গলায় দড়ির দাগ ও শ্বাসরোধের চিহ্নও দেখা গেছে, যা ইচ্ছাকৃত হত্যার ইঙ্গিত দেয়।

এই গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ফিলিস্তিনিদের মরদেহ উদ্ধারে জাতীয় প্রচারাভিযান পরিচালনাকারী একটি সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে ইসরায়েলের কাছে ৭৩৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ আটকে আছে, যাদের মধ্যে ৬৭ জন শিশু। অন্যদিকে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেতজ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার প্রায় দেড় হাজার শহিদের মরদেহ দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত স্দে তাইমান সামরিক ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে। এই ঘাঁটিটি নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত, যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং ১০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অঞ্চলটি এখন প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।