গ্রিনল্যান্ডের পথে অ্যান্টার্কটিকা, পৃথিবীর জন্য নতুন অশনিসংকেত

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তর দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা পৃথিবীর জন্য এক নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকায় বরফের উপরিভাগ গলে যাওয়া, হিমবাহের গতি বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক বরফ সংকুচিত হওয়ার মতো যেসব প্রবণতা লক্ষ করেছেন, তা গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলার পরিস্থিতির সঙ্গে মিলে যায়। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

‘নেচার জিওসায়েন্স’ নামক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে ‘আর্স টেকনিকা’ ওয়েবসাইট জানায়, দক্ষিণ মেরুর উষ্ণায়ন এমন একটি অঞ্চলে বরফ গলার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে, যা একসময় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত বলে মনে করা হতো। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ও ডেনিশ মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরফ গবেষক রুথ মট্রাম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অ্যান্টার্কটিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব দেখতে বহু যুগ লেগে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়।’

অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরের আয়তন প্রায় ৫৪ লাখ বর্গমাইল এবং এতে যে পরিমাণ বরফ জমা রয়েছে তা পুরোপুরি গলে গেলে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯০ ফুট (৫৮ মিটার) বেড়ে যেতে পারে। শুধু পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরেই যে পরিমাণ বরফ রয়েছে, তা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুটের বেশি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

২০০২ সালে রেকর্ড পরিমাণ উষ্ণ গ্রীষ্মের পর লারসেন বি বরফ তাকের ধস একটি ভয়াবহ পরিবর্তনের সূচনা করে। স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির হেলেন আমান্ডা ফিকার বলেন, ‘যে গতিতে এটি ঘটেছিল, তা আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে একে আর থামানো যাবে না।’ গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে বরফ গলার হার চারগুণ বেড়েছে।

গবেষক রুথ মট্রাম জানান, ২০২২ সালে একটি অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরের গভীরে পৌঁছে গিয়েছিল, যা এতদিন সবচেয়ে স্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। উপগ্রহ থেকে পাওয়া পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, উষ্ণ সমুদ্রস্রোত অ্যান্টার্কটিকার প্রতিরক্ষামূলক মেরু স্রোতকে ভেদ করে বরফ তাকের নিচের অংশে উষ্ণতা পৌঁছে দিচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভাইনের আর্থ সিস্টেম সায়েন্সের অধ্যাপক এরিক রিগনট বলেন, গ্রিনল্যান্ডের অভিজ্ঞতা অ্যান্টার্কটিকার পরিবর্তন সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘গ্রিনল্যান্ডে এমন কোনো নতুন পদার্থবিদ্যা নেই যা অ্যান্টার্কটিকার জন্য প্রযোজ্য নয়, এবং অ্যান্টার্কটিকাতেও এমন কিছু নেই যা গ্রিনল্যান্ডের জন্য প্রযোজ্য নয়।’

যদিও অ্যান্টার্কটিকার উষ্ণায়নের হার বর্তমানে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কিছুটা কম, তবে রুথ মট্রাম জোর দিয়ে বলেছেন যে এই মহাদেশটি আর বিচ্ছিন্ন নেই। তিনি বলেন, ‘সেখানে যা ঘটবে, তা বিশ্বের বাকি জলবায়ু ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে।’ এই গবেষণা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যত বেশি সম্ভব গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা।’