মিডিয়া অফিস: ১০ অক্টোবর থেকে ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল

চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ৪৭ বার লঙ্ঘন করে ৩৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার মিডিয়া অফিস শনিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়ে ইসরায়েলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধে দ্রুত মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ধারাবাহিক ও গুরুতর লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত মোট ৪৭টি নথিভুক্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।’ মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই লঙ্ঘনের ঘটনায় ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত, ১৪৩ জন আহত এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গোলাবর্ষণ, ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানানো এবং সরাসরি গুলি চালানোর মতো ঘটনা রয়েছে।

এই হামলাগুলোকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আবাসিক এলাকার উপকণ্ঠে অবস্থানরত সামরিক যান, ট্যাংক, দূর নিয়ন্ত্রিত সেন্সরযুক্ত বৈদ্যুতিক ক্রেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি হামলা চালাতে সক্ষম কোয়াডকপ্টার ড্রোন ব্যবহার করে এই লঙ্ঘনগুলো ঘটিয়েছে।

গাজা মিডিয়া অফিস জোর দিয়ে বলেছে, তাদের দলগুলো গাজা উপত্যকার সমস্ত গভর্নরেটে এই লঙ্ঘনগুলো নথিভুক্ত করেছে। তারা বলেছে, ‘দখলদার বাহিনী যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে না এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও আতঙ্কিত করার নীতি অব্যাহত রেখেছে।’ এই কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ দায়ী করে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় এবং চলমান আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে মধ্যস্থতাকারী ও জাতিসংঘের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিদিন ইসরায়েলিদের সরাসরি হামলায় হতাহতের খবর দিলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, তারা ‘ইয়েলো লাইন’ বা ‘হলুদ রেখা’ লঙ্ঘনের জবাবে গুলি চালায়। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে ‘হলুদ রেখা’ শব্দটি চালু হয়। এটি গাজার ভেতরের সেইসব এলাকাকে বোঝায় যেখান থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নতুন করে মোতায়েন করেছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের বেশিরভাগ অংশ থেকে সরে গেলেও শেজাইয়া পাড়া এবং আল-তুফাহ ও জাইতুন এলাকার কিছু অংশ থেকে সরেনি। খান ইউনিসে, সেনাবাহিনী মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ থেকে সরে গেছে। তবে ফিলিস্তিনিদের উত্তরের বেইত হানুন ও বেইত লাহিয়ার পাশাপাশি রাফাহ শহর এবং গাজার সমুদ্র উপকূলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং আরও ১১ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এর বিনিময়ে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থাপিত একটি পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। প্রথম ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনায় হামাসকে বাদ দিয়ে গাজার পুনর্গঠন এবং একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি গণহত্যায় ৬৮,১১৮ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন।