অবরোধের মধ্যেই গাজায় ৩ লাখ শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হচ্ছে

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি অবরোধ এবং চলমান সংকটের মধ্যেই জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এই উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, শনিবার (১৮ অক্টোবর) থেকে প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আবারও ক্লাসে ফিরবে।

ইউএনআরডব্লিউএর গণমাধ্যম উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, তার সংস্থা তিন লাখ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করেছে এবং পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রে সরাসরি ক্লাসে অংশ নেবে। বাকিরা অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা করবে। কারণ করোনা ও যুদ্ধের কারণে কয়েক বছর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।’ এই কর্মসূচিতে আট হাজার শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই গাজায় শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ইউএনআরডব্লিউএ ও সরকারি স্কুলগুলোর বেশিরভাগকেই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল। অনেক স্কুল ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৭২টি সরকারি স্কুল ধ্বংস, ১১৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১০০টিরও বেশি ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া তাদের হামলায় ১৭ হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী নিহত এবং ২৫ হাজার ৮৯৭ জন আহত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন ৭৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন তিন হাজার ১৮৯ জন।

আবু হাসনা আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে গাজা উপত্যকায় ২২টি কেন্দ্রীয় ক্লিনিক পুনরুজ্জীবিত করার। আমাদের কয়েক ডজন খাদ্যবিতরণ কেন্দ্র এবং হাজার হাজার কর্মী রয়েছে, যাদের ব্যাপক লজিস্টিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ তিনি জানান, ইউএনআরডব্লিউএ এরইমধ্যে কয়েকশ কোটি ডলারের ত্রাণসামগ্রী কিনে রেখেছে, কিন্তু সেগুলো গাজার বাইরে আটকে আছে। তার মতে, শীতের আগেই এই ত্রাণ প্রবেশ করানো অত্যন্ত জরুরি।

আবু হাসনা ত্রাণ প্রচেষ্টায় ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার নিন্দা করে বলেন, যুদ্ধবিরতির পর বহু মানুষ গাজা শহরে ফিরে এলেও তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। এখনই যদি ত্রাণ প্রবেশ না করানো হয়, তাহলে শীতকালে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হবে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইসরায়েল আশ্রয়ের উপকরণ, কম্বল, শীতকালীন পোশাক এবং ওষুধের মতো অনেক মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিস গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে।’

তিনি সতর্ক করে জানান, গাজার ৯৫ শতাংশ জনগণ আয়ের উৎস হারিয়ে এখন মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া পরিকল্পনার ভিত্তিতে গঠিত, যার প্রথম ধাপে বন্দী বিনিময় এবং পরবর্তীতে গাজার পুনর্গঠন ও হামাসবিহীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি হামলার তীব্রতায় গাজা উপত্যকা মূলত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।