বিনা অপরাধে ৪৩ বছর কারাভোগ, মুক্তি পেয়েই বিতাড়নের মুখে

প্রায় ৪৩ বছর কারাভোগের পর খুনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েও মুক্তি মেলেনি সুব্রামানিয়াম ‘সুবু’ ভেদমের। কারাগার থেকে বের হওয়ার পরই তাকে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা। এখন তাকে ভারতে বিতাড়নের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যে দেশে তিনি শৈশবের পর আর কখনো যাননি।

চলতি মাসের শুরুতে নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত ভেদমকে তার সাবেক রুমমেটকে হত্যার অভিযোগ থেকে নির্দোষ ঘোষণা করে। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) আটক করে। আইসিই জানায়, ১৯৮৮ সালের একটি পুরনো বিতাড়ন আদেশের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। এই আদেশটি দেওয়া হয়েছিল তার হত্যাকাণ্ড ও মাদক মামলার ওপর ভিত্তি করে। যদিও খুনের অভিযোগ থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন, তবে ১৯৮৪ সালের একটি মাদক মামলার দণ্ড এখনো বহাল রয়েছে।

ঘটনাটি প্রায় ৪০ বছর আগের। তখন ১৯ বছর বয়সী কলেজছাত্র টম কিনসারকে হত্যার দায়ে ভেদমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। নিখোঁজ হওয়ার নয় মাস পর কিনসারের মরদেহ একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়, যেখানে তার মাথায় গুলির চিহ্ন ছিল। এই মামলায় ভেদমের বিরুদ্ধে কোনো অকাট্য প্রমাণ না থাকলেও পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে শুরু থেকেই তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও ভেদমের জীবন কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রেই। মাত্র নয় মাস বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানেই স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছিলেন। তার বাবা-মা দুজনেই মার্কিন নাগরিক ছিলেন এবং গ্রেফতারের আগে তিনি নিজেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতারের সময় তার পাসপোর্ট ও গ্রিনকার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ভেদমের বোন সরস্বতী জানিয়েছেন, কারাগারে ভেদম একজন সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি অন্য বন্দিদের পরামর্শ দিতেন এবং কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেছিলেন। তবে আইসিই-র ডিটেনশন সেন্টারে তাকে এখন ৬০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে থাকতে হচ্ছে, যা পরিবারের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সরস্বতী বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, আমরা এক মুহূর্তের জন্যও তাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। সে বিনা অপরাধে সাজা খেটেছে। এরপর মর্যাদা ও সততার সঙ্গে কারাজীবন কাটিয়েছে। এর কি কোনও মূল্য নেই!’।

ভেদমের আইনজীবীরা এই বিতাড়নের আদেশ স্থগিত করার জন্য লড়াই করছেন। তার আইনজীবী এভা বেনাচ বিবিসিকে বলেন, ‘যে মানুষটি ইতিহাসের দীর্ঘতম অন্যায় সাজার শিকার, তাকে এমন এক দেশে পাঠানো হবে যেখানে তার কোনো আপনজন নেই— এটি আরেকটি ভয়াবহ অপরাধ হবে’। ভেদমকে ভারতে পাঠানো হলে তিনি পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন, কারণ তার সব নিকটাত্মীয় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করেন। তার পরিবার এখন তাকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।