গণঅভ্যুত্থানের পর ঐক্যের বদলে অনৈক্যের সুর, হতাশ বিএনপি মহাসচিব

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গড়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, রাজনীতিবিদদের ঐক্যের অভাবে তা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা চারদিকে দেখছি, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন। চারদিকে অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।”

সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে মাসিক ম্যাগাজিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ আয়োজিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল দেশের ভাগ্য নির্ধারণে রাজনীতিবিদদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজনীতিবিদরাই একটি দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তারা পথ তৈরি করেন, আবার পথ নষ্টও করতে পারেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “রাজনীতির মধ্যে সৌন্দর্য ও সততা না আনতে পারলে রাজনীতি কখনোই সুন্দর হবে না। রাজনীতি যদি জনগণ থেকে দূরে সরে যায়, যদি হয় বিদেশে সম্পদ গড়ার হাতিয়ার—তাহলে মানুষ ঘৃণা করবে।”

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই, দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র।”

তিনি সাধারণ শিক্ষার বদলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ফখরুল বলেন, “আমরা বিএ পাস, এমএ পাস তৈরি করছি। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী যদি পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিসিটি বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা নিতো, তাহলে তার চাকরি কেউ আটকাতে পারতো না। এই নীতির ব্যাপারেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা বেতনের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করছেন। অথচ শুধুমাত্র অতি মেধাবীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং বাকিদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা লাভবান হতাম। কিন্তু দেশে কারিগরি শিক্ষার ইনস্টিটিউট বা ভোকেশনাল সেন্টার নেই।”

বর্তমান সময়কে ‘ক্রান্তিকাল’ বা ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ‘জেন-জি’ প্রজন্মের সঙ্গে আগের প্রজন্মের চিন্তাভাবনার পার্থক্যের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজকে তোমরা যারা এখন যৌবনে পা দিচ্ছো, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে। যদি তুমি টিকতে না পারো, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মির্জা ফখরুল কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ এবং শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদসহ অনেকে।