ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দ্রুত বাড়াতে চায় তুরস্ক

তুরস্ক তার জাতীয় প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোকে দ্রুত এগিয়ে নেবে এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ‘উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক’ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করবে। সোমবার আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ কথা জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা যেমন আমাদের দেশীয় ও জাতীয় প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করছি, তেমনই আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করব।’ তিনি জানান, গত ২৮ অক্টোবর বিএমসি আঙ্কারা ট্যাংক ও নেক্সট-জেনারেশন আর্মরড ভেহিকল প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটির উদ্বোধন হয়েছে, যা ইউরোপের শীর্ষ তিনটি এবং বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি এ ধরনের স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। এরদোয়ান বলেন, তাদের লক্ষ্য হলো ছয় বছরের মধ্যে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীকে ২৫০টি আলতায় ট্যাংক সরবরাহ করা। তিনি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত বিএমসি, প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয় এবং সকল অংশীদারকে ধন্যবাদ জানান।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস আঙ্কারা সফর করেন, যা তুরস্কের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে বলে উল্লেখ করেন এরদোয়ান। তিনি জানান, বৈঠকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপাক্ষিক সকল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান সংগ্রহের চুক্তির মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

পর্যটন খাতের বিষয়ে এরদোয়ান বলেন, অসাধু মুনাফাখোর এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা ও সংঘাত সত্ত্বেও এই খাত এগিয়ে চলেছে। তিনি ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে প্রায় ৫ কোটি মানুষ আমাদের দেশ ভ্রমণ করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৬ শতাংশ বেশি। পর্যটন রাজস্বের দিক থেকেও আমরা শক্তিশালী অবস্থানে আছি।’ ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে তুরস্ক মোট ৫ হাজার কোটি ডলার পর্যটন রাজস্ব আয় করেছে, যা একটি রেকর্ড। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৭ শতাংশ বেশি। এরদোয়ান আশা প্রকাশ করে বলেন, বছর শেষে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।

দেশের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি কান যুদ্ধবিমানের মতো প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী’ এই বিমানগুলো তুর্কি বিমানবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে। তিনি আরও যোগ করেন, ‘হুরজেট যেমন তার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি কান-ও সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তার বিভাগে শীর্ষস্থানের জন্য প্রচেষ্টা চালাবে।’ এরদোয়ান বলেন, ‘গত সপ্তাহে স্পেনের সরকার কর্তৃক ৪৫টি হুরজেট কেনার অনুমোদন এই উচ্চাভিলাষী অবস্থানের প্রমাণ। আমরা নিশ্চিত যে আরও অনেক দেশ এগিয়ে আসবে। আমাদের থামানোর জন্য সব প্রকাশ্য ও গোপন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তুরস্ক প্রতিরক্ষা শিল্পে ইতিহাস গড়তে থাকবে।’

সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক নিজের দেশে বা প্রতিবেশী দেশগুলোর মাটিতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ দেখতে চায় না। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ওপর জোর দেন।