ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কি সীমিত করবে সুপ্রিম কোর্ট?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের একচ্ছত্র ক্ষমতা এখন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনার অধীনে এসেছে। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি যে আইনের ব্যবহার করেছেন, তা নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন শীর্ষ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারপতি। বুধবার অনুষ্ঠিত এক শুনানির পর ট্রাম্প প্রশাসনে এক ধরনের ‘অন্ধকার’ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে হোয়াইট হাউসের দুজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

ট্রাম্প তার শাসনামলে কেবল বাণিজ্যিক স্বার্থে নয়, বরং বৈদেশিক নীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও শুল্ককে একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শান্তি আলোচনা থেকে শুরু করে সীমান্ত সুরক্ষা কঠোর করার মতো বিষয়ে বিদেশি নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তিনি বারবার শুল্কের হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তার পছন্দ নয় এমন একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য কানাডাকে শাস্তি দিতেও তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করেন।

সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে ১৯৭৭ সালের ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন’-এর ব্যাপক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। ট্রাম্প এই আইনের ভিত্তিতেই আমেরিকার প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট এবং বাণিজ্য সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিকসহ তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতাকে সাংবিধানিক ও বৈদেশিক নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন।

তবে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টকে এতটা ব্যাপক ক্ষমতা দিতে পারে কি না। শুনানিতে বিচারপতি গোরসুচ প্রশাসনের যুক্তির বিরুদ্ধে বেশ আক্রমণাত্মক অবস্থান নেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কোন বিষয়টি কংগ্রেসকে তার সব ক্ষমতা, এমনকি যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতাও প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া থেকে বিরত রাখবে?’ বিচারপতিরা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে হলে কংগ্রেসে এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে, যা প্রেসিডেন্টের ভেটোকেও অগ্রাহ্য করতে পারে।

এই শুনানিটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনী পরাজয়ের ধাক্কা সামলাচ্ছে এবং মিত্রদের কাছ থেকে অর্থনীতি অবহেলার অভিযোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যদি আদালত ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করার পক্ষে রায় দেয়, তবে এটি তার জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দর-কষাকষির কৌশল মৌলিকভাবে বদলে ফেলতে বাধ্য হবেন তিনি।

আগামী বছরের শুরুতে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় আসার কথা রয়েছে। আদালত যদি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বহাল রাখে, তবে ট্রাম্প এটিকে তার শুল্ক নীতি অব্যাহত রাখার সবুজ সংকেত হিসেবে দেখবেন। আর ক্ষমতা সীমিত করা হলে, হোয়াইট হাউসকে আরও ধীরগতির ও সীমিত আইনের অধীনে নতুন করে শুল্ক ব্যবস্থা সাজাতে হবে।