চীনের হাতে যাবে এফ-৩৫ প্রযুক্তি? সৌদির সঙ্গে চুক্তিতে দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্র

সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির সম্ভাবনা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, রিয়াদের সঙ্গে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কারণে এই যুদ্ধবিমানের সংবেদনশীল প্রযুক্তি চীনের হাতে চলে যেতে পারে। এছাড়া, এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বও হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। পেন্টাগনের সাম্প্রতিক একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কয়েকশ কোটি ডলার মূল্যের ৪৮টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করা হলে বেইজিং এই প্রযুক্তিতে অপ্রত্যাশিত প্রবেশাধিকার পেয়ে যেতে পারে। যদিও প্রতিবেদনে কিছু সুরক্ষাব্যবস্থা বিবেচনার কথা বলা হয়েছে, তবে সেগুলো চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে রয়টার্স জানিয়েছিল, সৌদির কাছে এফ-৩৫ বিক্রির প্রক্রিয়াটি পেন্টাগনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ওয়াশিংটন সফরের আগে বিষয়টি আরও গতি পেতে পারে। তার এই সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধ এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শিগগিরই এই বিক্রির অনুমোদন দিতে পারেন। এরপর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃসংস্থাগত পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হবে। চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভা পর্যায়ে আরও অনুমোদন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠকে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ এফ-৩৫ চুক্তিটিও স্বাক্ষরিত হতে পারে।

মার্কিন গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্বেগের আরেকটি বড় কারণ হলো, সৌদি আরবের কাছে এই যুদ্ধবিমান বিক্রি করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে নিশ্চিত করে আসছে যে, ইসরায়েল তার প্রতিবেশীদের তুলনায় ‘গুণগত সামরিক সুবিধা’ বজায় রাখবে। এর অর্থ হলো, ইসরায়েলকে দেওয়া অস্ত্র প্রযুক্তি সব সময়ই এই অঞ্চলের আরব দেশগুলোর চেয়ে উন্নত হবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যাদের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে এবং প্রায় এক দশক ধরে তারা এটি ব্যবহার করে আসছে। স্টেলথ প্রযুক্তির এই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রাডার এড়িয়ে চলতে সক্ষম এবং এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের আলোচনা মূলত ইসরায়েল সংক্রান্ত সংবেদনশীলতার কারণেই আটকে ছিল। তবে জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল অস্ত্র চুক্তিতে সম্মত হয়, যাকে হোয়াইট হাউস ওয়াশিংটনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি বলে অভিহিত করেছিল।

সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান বৃহস্পতিবার জানান, তিনি সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।