ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। গত আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন আরোপিত ২০ শতাংশ ‘রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ককে এ পতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) আগস্ট থেকে অক্টোবর মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১.৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের তিন মাসের তুলনায় ৫৩ মিলিয়ন ডলার বা ২.৮৮ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের পণ্যে নতুন ২০ শতাংশ শুল্ক। এতে বাজার সংকুচিত হচ্ছে।

তিনি জানান, সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রায় ২০টি ব্র্যান্ডের দোকান পরিদর্শন করেন। সেখানে ক্রেতার সংখ্যা কম এবং বিক্রিও হ্রাস পাচ্ছে বলে দোকানকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারেন।

আগামী মাসগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আরও কমতে পারে, মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও আগস্ট অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে, তবে জুলাইসহ পুরো জুলাই-অক্টোবর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানি বেড়েছে ৫.১৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ২.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ২.৪৬ বিলিয়ন ডলার।

পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, আগস্টে শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই মার্কিন ক্রেতারা আগাম পণ্য আমদানি করেছিলেন। এতে জুলাইয়ে রপ্তানিতে ১৯ শতাংশ বড় বৃদ্ধি দেখা যায়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এই বৃদ্ধি মূলত আগাম কেনাকাটার ফল। কিন্তু পরবর্তী তিন মাসের তথ্য দুর্বল বা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি চাহিদা সংকোচন এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত বহন করছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েকটি ত্রৈমাসিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। শুল্কের এই কঠিন পরিবেশকে সুযোগে পরিণত করতে হলে মূল্য সংযোজন বাড়ানো, বাজার বৈচিত্র্য এবং শক্তিশালী বাণিজ্য কূটনীতি জরুরি।

গত আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব দেশ থেকেই আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশি পোশাকের ওপর ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলেও চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সবার ওপরই শুল্ক বেড়েছে।

চীন ও ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক হার বাংলাদেশে আরোপিত হারের চেয়েও বেশি।

এ অবস্থায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা আশা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীন ও ভারত থেকে অর্ডার সরিয়ে বাংলাদেশে স্থানান্তর করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের অধীন ওটেক্সা গত জুলাইয়ের পর থেকে অ্যাপারেল আমদানি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি। ফলে নতুন শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশ থেকে কত আমদানি করছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নতুন শুল্ক আরোপের পর আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে।