এক প্রশ্নকে ঘিরে উত্তাল ট্রাইব্যুনাল, দুই আইনজীবীর তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে এক রাজসাক্ষীকে জেরা করার সময় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। আশুলিয়ায় পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি ও পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো রাজসাক্ষী হিসেবে জেরা করা হচ্ছিল পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হককে। জেরার এক পর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান সাক্ষী আবজালুলকে প্রশ্ন করেন, তিনি থানায় ফিরে এএসআই রাজু আহমেদের মৃত্যুর কথা শুনেছিলেন কি না।

এই প্রশ্নের পরেই তীব্র আপত্তি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বা প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজসাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও এই ধরনের প্রশ্ন করা যায় না। এর জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন দারোগাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এই প্রশ্ন করা যাবে না? এ রকম বিচার করতে কোর্ট এখানে আসেন নাই।’ এ সময় তিনি নিহত পুলিশ সদস্য রাজুর স্ত্রীর করা মামলার নথি হাতে নিয়ে কথা বলছিলেন।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন প্রসিকিউটর আসামিপক্ষের আইনজীবীর আনা নথির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর উত্তরে আইনজীবী মিজানুর রহমান মানবাধিকারকর্মী সুখরঞ্জন বালির গুম হওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আরেকটা সুখরঞ্জন বালি তৈরি করতে চান? সাফাই সাক্ষীর নাম দিলে শুরু হয়ে যায় থ্রেট করা।’ এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাদের (আসামিপক্ষের আইনজীবী) কোর্টে আসাই উচিত হয়নি।

দুই আইনজীবীর বাদানুবাদের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাক্ষ্য নিতে গেলেই এত কাহিনি’। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষী আবজালুল হককে ‘গায়ের জোর’-এর কাছে পেরে উঠছেন না বলে মন্তব্য করলে প্রসিকিউটর উচ্চস্বরে বারবার ‘হোয়াট ইজ দিস’ বলতে থাকেন। তখন বিচারকেরা উভয় পক্ষকে আদালতের পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

এর আগে, জেরার মুখে সাক্ষী শেখ আবজালুল হক স্বীকার করেন যে, তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট অনুমতি ছাড়াই আশুলিয়া থানা ত্যাগ করেছিলেন এবং ১৫ আগস্ট ফিরে আসেন। এই আবজালুল হক আশুলিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাজসাক্ষী হন।

উল্লেখ্য, আশুলিয়ায় সংঘটিত এই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদসহ আটজন পলাতক। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও মো. শহিদুল ইসলাম, ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন এবং এসআই শেখ আবজালুল হকসহ অন্যরা।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।