শেখ হাসিনাকে নিয়ে সংকট: ভারতের সামনে চারটি অস্বস্তিকর বিকল্প
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে এই দণ্ড দিলেও শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করায় এবং নয়াদিল্লি তাকে হস্তান্তরে কোনো আগ্রহ না দেখানোয় এই রায় কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, যা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ তৈরি করে দেয়। আগামী বছরের শুরুতে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এক গভীর কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে: ঢাকা শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়, কিন্তু দিল্লি তাতে রাজি নয়। ফলে, ভারতের দেওয়া মানবিক আশ্রয় এখন এক দীর্ঘ ও অস্বস্তিকর পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে চারটি অস্বস্তিকর বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, তারা হাসিনাকে হস্তান্তর করতে পারে, যা তারা করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, বর্তমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, যা আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দিল্লির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তৃতীয়ত, শেখ হাসিনাকে নীরব থাকতে এবং কোনো ধরনের বিবৃতি বা সাক্ষাৎকার দেওয়া থেকে বিরত রাখতে চাপ দেওয়া, যা তিনি মেনে নেবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর শেষ বিকল্প হলো, তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তৃতীয় কোনো দেশ খুঁজে বের করা, যা প্রায় অসম্ভব। কুগেলম্যানের মতে, ‘গুরুতর আইনি সমস্যা ও নিরাপত্তাঝুঁকিতে থাকা এমন একজন অতিথিকে’ খুব কম দেশই গ্রহণ করতে চাইবে।
শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করা ভারতের জন্য অচিন্তনীয়। কারণ, ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ই তাকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখে। কুগেলম্যান বলেন, ‘ভারত তার বন্ধুদের থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেওয়ার জন্য গর্ববোধ করে।’
বাংলাদেশের জন্মের পেছনে ভারতের নির্ণায়ক ভূমিকার কারণে দুই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই গভীর। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারতও এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার। গত বছর দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ১,৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশের শিল্প খাত ভারতের কাঁচামাল, জ্বালানি ও ট্রানজিট রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
তবে অনেকে মনে করছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন দ্রুত তাদের বৈদেশিক সম্পর্কে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিয়ান সাই সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলেছেন, ইউনূস শাসনামলের প্রথম কয়েক মাস ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ‘ভারত-নির্ভরতা মুক্ত’ করার এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। একসময় প্রতিটি আঞ্চলিক মঞ্চে ভারতের পাশে থাকা বাংলাদেশ এখন বিচার বিভাগীয় বিনিময় বাতিল করছে, ভারতের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করছে এবং কৌশলগত অংশীদারত্বের জন্য বেইজিং, ইসলামাবাদ এমনকি আঙ্কারার দিকে ঝুঁকছে।
ঢাকার সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন, যেখানে দিল্লির ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১১ শতাংশ। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার শেষ বছরগুলোতে তার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠাকে দিল্লি সমর্থন জানিয়েছিল, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে।
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ জানান, রাজনৈতিক পালাবদল সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সাধারণত টিকে থাকে। তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে ওঠানামা এলেও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকে।’
লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অবিনাশ পালিওয়াল মনে করেন, আগামী ১২ থেকে ১৮ মাস এই সম্পর্ক উত্তাল থাকবে। তার মতে, এই সংকট মোকাবিলায় ‘ঢাকার সব রাজনৈতিক অংশীদার, এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গেও নীরব ও ধৈর্যশীল আলোচনা’ চালিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে, তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘জনগণের ধারণা বা নৈতিকতা দিয়ে পররাষ্ট্রনীতি চালিত হয় না—রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক খুব কমই এমন হয়। আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যা বরাবরই বিভেদপূর্ণ এবং ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।’
শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকেই দেশের মূল স্বার্থ—সীমান্ত সুরক্ষা, বাণিজ্য এবং সংযোগ—বজায় রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও ভারতবিরোধী মনোভাবের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। কুগেলম্যানের মতে, ‘আমি গুরুতর কোনো সংকটের আশঙ্কা করছি না, তবে সম্পর্কটি ভঙ্গুর অবস্থায় থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
বিবিসি অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.