বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে ট্রাইব্যুনালে তলব, চাইলেন ওকালতির সনদ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকে তলব করা হয়েছে। আদালত অবমাননার এক আবেদনের শুনানির পর রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্যানেল এই আদেশ দেয়। আগামী ৮ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তার প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনজীবী হিসেবে অনুশীলনের সনদও সঙ্গে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার শুনানির সময় আদালত ফজলুর রহমানের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় ও তার অনুশীলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন, ‘ফজলুর রহমান কে? তার কি ওকালতির সার্টিফিকেট আছে? তিনি কি প্র্যাকটিস করেন? কোনোদিন কোর্ট-কাচারিতে আসলে তিনি এমন কথা বলতে পারতেন না।’ আদালত আরও বলেন, ‘আইন, রায় এমনকি বিচারকের সমালোচনা করা যায়। কিন্তু রায় মানি না, এই কথা বলা কেবল আদালত অবমাননাই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।’

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও মিজানুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন। তারা জানান, গত ২৩ নভেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটি টকশোতে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি এই কোর্ট মানি না। এই কোর্টের বিচার মানি না।’ তিনি আরও দাবি করেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না। প্রসিকিউটররা জানান, ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালের আইন না জেনেই এমন মন্তব্য করেছেন।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম আদালতে বলেন, ফজলুর রহমান নিজেকে ৪৪ বছরের অভিজ্ঞ আইনজীবী দাবি করলেও তারা যাচাই করে দেখেছেন, তিনি ১৯৯২ সাল থেকে আইন পেশায় আছেন, যা প্রায় ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতা। এসময় প্রসিকিউশন জানায়, ফজলুর রহমান বিএনপির একজন উপদেষ্টা এবং আগামী নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়া জুলাই বিপ্লব নিয়ে মন্তব্য করায় বিএনপি তাকে একবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল বলেও আদালতকে অবহিত করা হয়।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ফজলুর রহমান টকশোতে প্রসিকিউশনের সবাইকে শিবির সমর্থিত বলে দাবি করেছেন। এর জবাবে ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট করে বলেন, ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইন অনুসারে এই ট্রাইব্যুনাল শুধু একাত্তর নয়, বরং আগে ও পরে সংঘটিত যেকোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে পারে। আদালত প্রসিকিউশনকে ট্রাইব্যুনালের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেও উল্লেখ করেন। সব পক্ষের বক্তব্য ও টকশোর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার পর অভিযোগগুলোকে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ আখ্যা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে তলবের এই আদেশ দেন।