এভারকেয়ারে কঠোর নিরাপত্তা, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ খবর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিকিৎসাধীন দলীয় নেত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশজুড়ে যখন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই তার চিকিৎসার তদারকিতে যুক্ত হয়েছেন বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। গত রোববার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন একটি মেডিকেল বোর্ড। এই বোর্ডে দেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও সহায়তা প্রদান করছেন। চিকিৎসা কার্যক্রমে গতি আনতে চীন থেকে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় পৌঁছেছেন। তারা হলেন মিজ ঝাং ইউহুই, কাই জিয়ানফাং, মিজ মেং হং এবং ইউয়ান জিন। গত রাতে হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের স্বাগত জানান।

এর আগে যুক্তরাজ্য থেকে উড়ে আসেন প্রখ্যাত চিকিৎসক রিচার্ড বেলে। ঢাকায় নেমেই তিনি কালক্ষেপণ না করে সরাসরি হাসপাতালে চলে যান এবং খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। তবে তার পর্যবেক্ষণ বা মতামত সম্পর্কে দলটির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। দলীয় সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার ফুসফুসের সংক্রমণজনিত জটিলতা কিছুটা কমলেও হৃদযন্ত্রের সমস্যা এখনো বিদ্যমান। সামগ্রিকভাবে তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধান ফটকে বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের নিকটবর্তী মাঠে বিমান ও সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মহড়া বা পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন নিয়ে যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল বোর্ডের মতামতের ওপর। এই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়সীমা নির্ধারিত হতে পারে। গত জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং প্রায় চার মাস পর মে মাসে দেশে ফিরেছিলেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজ নেন। ফয়জুল করীম গণমাধ্যমকে জানান, তিনি দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এখন পর্যন্ত অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে অবস্থানকালে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এসকান্দার, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ড. ইউনূস দলীয় নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসীকে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।