সুদান ইস্যুতে নতুন শঙ্কা জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক সুদানের কর্দোফান অঞ্চলে চলমান ভয়াবহ সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যকার এই লড়াই অঞ্চলটিকে নতুন করে গণহত্যামূলক অপরাধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ভলকার টুর্ক অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কর্দোফানে সেনাবাহিনী, আরএসএফ ও সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থের মধ্যে টানা সংঘর্ষ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ফলে সুদানে নতুন একটি গণহত্যার ঢেউ আসার ভয় করছি।’

তার কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর আরএসএফ বাহিনী কর্দোফানের বারা শহর দখল করার পর থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এই সময়ের মধ্যে বিমান হামলা, আর্টিলারি গোলাবর্ষণ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অন্তত ২৬৯ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানী খারতুমকে দারফুরের সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিকে কেন্দ্র করে কর্দোফানের তিনটি রাজ্যজুড়ে লড়াই তীব্র হয়েছে। সেনাবাহিনী সড়কটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, অন্যদিকে আরএসএফসহ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এটি দখলে নিতে মরিয়া।

এর আগে দারফুরের আল-ফাশির শহর দখলকালে আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল একটি কমিটি গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর মতে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।

মানবাধিকার সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, এই অঞ্চলে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে আটক, অপহরণ, যৌন সহিংসতা এবং শিশুদের জোর করে যুদ্ধে জড়ানোর মতো ঘটনা বাড়ছে। ভলকার টুর্ক বলেন, ‘আল-ফাশিরের ভয়াবহ ঘটনার পর এত দ্রুত কর্দোফানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’

বিবৃতিতে ৩ নভেম্বর উত্তর কর্দোফানের এল ওবেইদে শোকাহত মানুষের তাঁবুতে ড্রোন হামলায় ৪৫ জন নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়, যাদের একটি বড় অংশই নারী ছিলেন। এছাড়া, ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ কর্দোফানের কাউদায় সেনাবাহিনীর আরেকটি ড্রোন হামলায় অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ কর্দোফানের কাদুগলি ও ডিলিং এবং উত্তর কর্দোফানের এল ওবেইদ শহর বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে কাদুগলি নিশ্চিত দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। গত এক মাসে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ কর্দোফান অঞ্চল ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।