ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপ থাকবেন না গুতেরেস

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য চাপ অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। শুক্রবার ২০২৫ সালের জাতিসংঘ রেহাম আল-ফাররা (আরএএফ) ফেলোশিপ সেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, এই ইস্যুতে তিনি ‘চুপ থাকবেন না’।

তরুণ সাংবাদিকদের সতর্ক করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বিশ্ব বর্তমানে সংঘাত, জলবায়ু বিশৃঙ্খলা, গভীর অসমতা এবং অনিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো এক ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ বা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি।

রাজনৈতিক অগ্রগতির প্রচেষ্টা থেকে সরে না আসার প্রত্যয় জানিয়ে গুতেরেস বলেন, অতীতের সহিংসতা এড়ানোই এখন আর ‘যথেষ্ট নয়’। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত জরুরি যে আমরা দ্বিতীয় ধাপের দিকে অগ্রসর হই এবং চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিশ্চিত করি... ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কোনো শান্তি আসবে না।’

তিনি আরও যোগ করেন, নিরাপত্তা পরিষদ যদি এই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নাও পারে এবং পরিস্থিতি যদি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী দিকে মোড় নেয়, তবুও তিনি ‘চুপ থাকবেন না’।

বক্তব্যের শুরুতে গুতেরেস বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির এক অন্ধকার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময়ের চেয়ে বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নাটকীয়ভাবে অনেক বেশি বিপজ্জনক। এ সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ‘মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা’, সুদান, মিয়ানমার ও সাহেল অঞ্চলে বাড়তে থাকা সহিংসতা এবং আফ্রিকা জুড়ে সন্ত্রাসের বিস্তারের কথা উল্লেখ করেন।

নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তার কঠোর সমালোচনা করে তিনি এটিকে ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ এবং কাঠামোগতভাবে সেকেলে বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এখানে আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার কোনো স্থায়ী প্রতিনিধিত্ব নেই এবং ভেটো ব্যবস্থা ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনকেই সুরক্ষা দেয়’।

জলবায়ু সংকট নিয়ে নিজের প্রজন্মের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে গুতেরেস বলেন, ‘আমার প্রজন্ম জলবায়ু কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রমের দিকে যাচ্ছে, যা মানব স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। তিনি জানান, ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা মাত্র ১০ শতাংশ কমবে।

ফেলোদের প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস জানান, জাতিসংঘ গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর জোরালো করার জন্য সংস্কারের চেষ্টা করছে। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘ক্ষমতা কখনো বিতরণ করা হয় না, ক্ষমতা অর্জন করে নিতে হয়।’ ব্রাজিল, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো উদীয়মান অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা এখনও ১৯৪৫ সালের বিশ্বের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় তহবিলের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দাতা দেশের অনুদান কমে যাওয়ায় ক্ষুধা, স্বাস্থ্যসেবার অভাব এবং ভেঙে পড়া অবকাঠামোর মুখোমুখি হওয়া জনগোষ্ঠীর জন্য ‘গভীর বিপর্যয়’ নেমে এসেছে। সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ও লজিস্টিকস একীভূত করে সম্পদ সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে।

সবশেষে তরুণ সাংবাদিকদের বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা না হারানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বৈশ্বিক সমস্যার কোনো সমাধান নেই... এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাতিল করা সমাধান নয়, বরং এদের রূপান্তর করাই হলো উত্তর।’