জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরলেন রেড ক্রস কর্মকর্তা

দোহা ফোরামে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের (আইএফআরসি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জাতিসংঘের আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন বা কপ ৩১ আয়োজক হিসেবে তুরস্কের উচিত জলবায়ুজনিত অভিবাসনের বিষয়টি সামনে আনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলা।

আইএফআরসির জলবায়ু, দুর্যোগ ও সংকট বিভাগের পরিচালক ক্যারোলিন হোল্ট দোহা ফোরামের সাইডলাইনে কথা বলার সময় জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের তীব্রতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক কিছুই আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এটি শুধু দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, বরং এর ভয়াবহতাও বাড়ছে।’

হোল্ট উল্লেখ করেন, দুর্যোগগুলো এখন একটার পর একটা আসছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ একটি সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন আরেকটি সংকটের মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের দুর্যোগের ঘটনা আরও বেশি দেখছি।’

অর্থনৈতিক দুর্বলতা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা দেখছি, জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বের দুর্বল দেশগুলো। যেসব দেশে প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণকে সহায়তা করার মতো শক্তিশালী নয়, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগগুলো পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে।’

হোল্ট জোর দিয়ে বলেন, কোনো অঞ্চলই এই প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এটাই যে এটি অত্যন্ত অনির্দেশ্য এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে দেখছি আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আমেরিকার দেশগুলোতে এর প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো একটি অঞ্চল অন্যটির চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত—এমনটা বলা কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তন কোনো ভেদাভেদ করে না, তাই অনেক দেশ এবং পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান জলবায়ু দুর্যোগের শিকার হচ্ছে।’

মানবিক সহায়তা খাত আগামী বছরগুলোতে প্রত্যাশিত জলবায়ুজনিত অভিবাসনের ব্যাপকতা সামলাতে প্রস্তুত নয় বলেও মন্তব্য করেন হোল্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি জলবায়ুর কারণে আরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যারা দুর্যোগ থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে, তাদের স্বাগত জানাতে বা সহায়তা করতে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রস্তুত নই বলে আমি মনে করি। আমাদের পর্যাপ্ত রসদ নেই এবং দুঃখজনকভাবে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছারও অভাব দেখা যাচ্ছে।’

২০২৬ সালের দিকে ইঙ্গিত করে হোল্ট সতর্ক করেন যে, আন্তর্জাতিক তহবিল ও সহযোগিতার অভাবে মানবিক কার্যক্রমের জন্য বছরটি আরও কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সামনে একটি কঠিন বছর আসছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে তহবিল ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মানবিক খাতে অর্থায়ন কমে যাচ্ছে, যার অর্থ হলো মানুষের প্রয়োজন বাড়লেও তারা সহায়তা কম পাচ্ছে।’

কপ ৩১ সম্মেলনের আয়োজক হওয়ার জন্য তুরস্ককে অভিনন্দন জানিয়ে হোল্ট বলেন, জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় দেশটির অনন্য ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিবাসন ইস্যুতে তুরস্কের অনেক কিছু বলার আছে। দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম অভিবাসী ও শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। জলবায়ু সংকট, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বা সংঘাত—যে কারণেই মানুষ পালাক না কেন, তাদের পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা রয়েছে। কারণ শেষ পর্যন্ত এই বিষয়গুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংযোগস্থল হিসেবে তুরস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। যারা জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে কম দায়ী অথচ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে তুরস্কের অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে, যেমনটা তারা বহু বছর ধরে করে আসছে।’