গভর্নর: খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় আইনি সংস্কার চলছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে দেশের আইনি সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ২০২৫’ এবং ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশনা উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে গভর্নর এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দেশীয় পুনরুদ্ধারের মধ্যে রয়েছে খেলাপিদের সম্পত্তি, ব্যাংকের শেয়ার ও অন্যান্য সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। আন্তর্জাতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, যারা বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে।

বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ‘রিংফেন্সিং’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের ম্যানেজমেন্টকে কোনো সুবিধা নিতে না দিয়ে অপারেশনাল ফাইন্যান্সিং নিশ্চিত করা হচ্ছে, যাতে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং অর্থ সিস্টেমে ফিরে আসে।

গভর্নর বলেন, সম্পদ পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে, তবে প্রক্রিয়াগুলো সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে অতীতের তারল্য সংকট, অপর্যাপ্ত মূলধন ও সুশাসনের অভাব বড় সমস্যা ছিল।

স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কোনো ব্যাংক লোকসান করলে বা মূলধন ঘাটতিতে থাকলে তারা কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না, এমনকি কর্মীদের জন্য কোনো বোনাসও অনুমোদিত হবে না। ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনটি ব্যাংক এবং ৯টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন করা হবে।

গত ১৬-১৭ মাসে দেশের অর্থনীতির গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বিনিময় হারের অস্থিরতা, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রিজার্ভের পতন ও ব্যাংকিং খাতের অস্থিতিশীলতা অন্তর্ভুক্ত।

গভর্নর বলেন, সাধারণ বাণিজ্য প্রবাহ পুনরায় চালু করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রাথমিক বৈদেশিক সমস্যার সমাধান ও বকেয়া নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

বিনিময় হার স্থির রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত বিনিময় হারকে অস্থিরভাবে ভাসতে দেওয়া হয়নি। এর ফলে বর্তমানে বিনিময় হার ১২২+ স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি হিসাব সারপ্লাসে এবং রিজার্ভে বিলিয়ন ডলারের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মুদ্রানীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক নীতি অনুসরণ করছে। সুদের হার ও বিনিময় নীতি নির্ধারণে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ নেই, এবং বাজেট অর্থায়নের জন্য নতুন টাকা ছাপানো হচ্ছে না, বরং বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে।