গুতেরেস: মানবিক সহায়তার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য, ঝুঁকির মুখে লাখো প্রাণ

জাতিসংঘের ‘সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড’ বা সিইআরএফ-এর তহবিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চরম সীমায় পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

কানাডার হ্যামিল্টনে মঙ্গলবার ২০২৬ সালের সিইআরএফ-এর জন্য আয়োজিত উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা খুব কঠিন সময়ে মিলিত হয়েছি।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংকট যখন বহুগুণ বাড়ছে, তখন মানবিক চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ‘মানবিক সহায়তা ব্যবস্থার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে এবং লাখো মানুষের জীবন এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলছে।’

সিইআরএফ-কে জাতিসংঘের ‘নমনীয় ও প্রাথমিক সাড়াদানকারী তহবিল’ হিসেবে উল্লেখ করেন গুতেরেস। তিনি জানান, ২০০৬ সাল থেকে এই তহবিল ১০০টিরও বেশি দেশে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা হিসেবে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। সংস্থাটি ২০টিরও বেশি জাতিসংঘ এজেন্সি এবং শত শত অংশীদারের সঙ্গে কাজ করে প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

তহবিলের দ্রুততা ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘সিইআরএফ কার্যকর, কারণ এটি দ্রুত, নমনীয় এবং ন্যায়সংগত। প্রায়শই অন্য কোনো সহায়তা আসার আগেই এটি পৌঁছে যায়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেক জায়গায় সিইআরএফ জীবনরক্ষাকারী সাহায্য এবং কোনো সাহায্য না পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’

তবে জাতিসংঘ প্রধান সতর্ক করেন যে, ২০২৫ সালে দাতাদের অবদান ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে’ হ্রাস পাওয়ায় এই ব্যবস্থাটি এখন ‘সবচেয়ে বড় পরীক্ষার’ মুখোমুখি।

তিনি জানান, এ বছরের জন্য প্রাক্কলিত অবদান ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একে তিনি একটি ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ হিসেবে অভিহিত করেন, যা তাদের সাড়া দেওয়ার সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এর ফলে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু, ক্ষুধা এবং প্রয়োজনীয় সেবার অভাব দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি মুহূর্ত যখন আমাদের কাছে কম সম্পদ নিয়ে আরও বেশি কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘এটি কোনোভাবেই টেকসই নয়।’

সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত ১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং স্থিতিশীল তহবিল বজায় রাখতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘২০ বছর আগে সিইআরএফ তৈরির সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি সহজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল: যখন বিপর্যয় আঘাত হানবে, তখন সাহায্য আসবে।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচারও একই শঙ্কার প্রতিধ্বনি করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘নিষ্ঠুর কাটছাঁট আমাদের নিষ্ঠুর পছন্দ বেছে নিতে বাধ্য করছে। আমরা মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নির্মমভাবে অগ্রাধিকার নির্ধারণে (ট্রায়াজ) বাধ্য হয়েছি।’

তিনি জোর দেন যে, বাস্তবতার কারণেই মানবিক কার্যক্রম ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো স্লোগান নয়, এটি একটি চ্যালেঞ্জ, একটি লক্ষ্য এবং বেঁচে থাকার কৌশল। এটি আরও বুদ্ধিদীপ্ত, দ্রুততর এবং সম্প্রদায়ের কাছাকাছি থাকার বিষয়।’ ফ্লেচার উল্লেখ করেন যে, আগামী বছরের চাহিদার কারণে এই তহবিল ‘আগের চেয়ে অনেক বেশি’ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে কম অর্থায়ন পাওয়া জরুরি অবস্থাগুলোর জন্য ১০ কোটি ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেন ফ্লেচার। তিনি একে ২০২৫ সালের জন্য তাদের প্রাক্কলিত আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমান বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এই অর্থায়ন কেবল শূন্যস্থান পূরণ করা নয়, বরং কারা সাহায্য পাবে, কখন এবং কেন—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। স্থানীয় পর্যায়ে আরও গভীর সম্পৃক্ততা এবং নারী ও মেয়েশিশুরা (যারা প্রায়শই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে) যেন সাড়াদান কার্যক্রমের কেন্দ্রে থাকে, তা নিশ্চিত করার ওপর তিনি জোর দেন। তিনি আবারও বলেন, ‘সিইআরএফ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রাক্কলিত আয়ের সঙ্গে লড়াই করছে।’

সিইআরএফ তার ২০তম বার্ষিকী পালন করছে এবং প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ও লাখো জীবন বাঁচানোর সাফল্য উদযাপন করছে। এমন সময়ে ফ্লেচার বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। ১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যটি প্রতীকী নয়, এটি অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমানে আমরা ভুল দিকে এগোচ্ছি।’