সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে তারেক রহমানের দুঃখ প্রকাশ

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে আয়োজিত এই সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি অতীতের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে উপস্থিত সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সভায় বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে তারেক রহমান ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক ও মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমির প্রসঙ্গ টেনে ব্যক্তিগত একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্ক্রিনে একজনকে দেখতে চাচ্ছি। এটা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, তবুও এখানে উল্লেখ করছি। আম্মার সময় উনি দায়িত্বে ছিলেন। রুমি সাহেব কি উপস্থিত আছেন?’ এ সময় অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সারিতে থাকা সাদিক হাসান রুমি নিজের উপস্থিতি জানান দেন।

তারেক রহমান পুরোনো সেই ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘রুমি সাহেব, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, একবার পুরান ঢাকা থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত একটি মিছিল হয়েছিল। আম্মাও (বেগম খালেদা জিয়া) সেই মিছিলে ছিলেন। পুরো পথ আমি হেঁটে এসেছিলাম। মিছিলে প্রচণ্ড ভিড় ও হট্টগোল ছিল। তখন আপনি আমাকে কিছু একটা বলেছিলেন। আমি সেদিন আপনার সঙ্গে একটু রূঢ় ব্যবহার করেছিলাম। সব মিলিয়ে আমি সেদিনের ঘটনার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আজ সেই সুযোগ পেয়েছি। অতীতের ওই ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।’ তারেক রহমানের এই বক্তব্যের জবাবে মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি বলেন, ‘আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। বিষয়টি মনে রাখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি তার মা বেগম খালেদা জিয়ার আবেগের কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অসুস্থ হওয়ার আগে সর্বশেষ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে বারণ করলেও মনের অদম্য শক্তিতে তিনি সেখানে যান। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর মানসিকভাবে তাকে এতটাই চাঙ্গা দেখাচ্ছিল যে, মনেই হয়নি তিনি অসুস্থ। এই ঘটনা প্রমাণ করে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমানবাহিনী—পুরো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তার মমতা কতটা গভীর।

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় জিয়া পরিবার ও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। একটি দূরত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ভুল ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার করা হতো। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আজকের এই খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। আমি ব্যক্তিগত ঘটনাটি এ কারণেই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবরের সঞ্চালনায় এই সভায় ১০১ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, মেজর (অব.) রেজা করিম, মেজর (অব.) সামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, মেজর (অব.) আজিজুল হক, কর্নেল (অব.) হারুনুর রশিদ, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক আহমেদ, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোস্তাফিজ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, কর্নেল (অব.) জগলুল, লেফটেন্যান্ট (অব.) ইমরান কাজল, মেজর (অব.) গোলাম মান্নান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) রেজাউর রহমান ও কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা।