এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করেছেন, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সাইফুল আলমের এই পদক্ষেপকে তিনি ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক এবং এ দেশের ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন, তাই সরকার এই মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।

আহসান এইচ মনসুর

রোববার সচিবালয়ে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত আন্তসংস্থা টাস্কফোর্সের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা শেষেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এস আলমের মামলার প্রসঙ্গটি উঠে আসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন গভর্নর। তিনি উল্লেখ করেন, লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলাটি ছিল, তারা সেটি লড়েননি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা হেরে গেছেন। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে সাবেক এই মন্ত্রী আর আপিল করবেন না।

অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা সম্ভবত খুবই ভাগ্যবান হব যদি লন্ডন থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মামলার সমাধান হয়ে যায়।’ তিনি ধারণা প্রকাশ করেন, আইনি প্রক্রিয়া ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে এই অর্থ দেশে ফেরত আসতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলে তিনি মন্তব্য করেন।

টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত রোববারের এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক আলোচনায় অংশ নেন।

বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করছে সিআইডি, এনবিআর এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্ত কার্যক্রমের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বিএফআইইউ। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং দেশের শীর্ষ ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর ঋণ অনিয়ম, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তে উঠে আসা তথ্যানুযায়ী, এস আলম গ্রুপ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। পাচার করা অর্থে ৬টি দেশে তাদের হোটেল, জমি ও বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে।

অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে এই গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের সন্ধান পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের ৮টি দেশে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সিকদার গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের সম্পদ ছড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে। এছাড়া ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ব্যাংক হিসাব ও জমি এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে একাধিক বাড়ি ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ বা জব্দের আদেশ এসেছে।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। নাবিল গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ রয়েছে। এদিকে পূর্বাচলে প্লট অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তবে জেমকন গ্রুপের ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা এখনো বড় কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাননি।

সার্বিক তদন্ত ও অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে অনেক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সাধারণত এ ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.