তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার সেনাপ্রধানসহ ৮ জন নিহত

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার অদূরে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার সেনাপ্রধান (চিফ অব স্টাফ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদসহ আটজন নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবাইবাহ এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে একে ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আঙ্কারা থেকে ত্রিপোলি ফেরার পথে এই বিপর্যয় ঘটে।

তুর্কি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ব্যক্তিগত ফ্যালকন-৫০ জেট বিমানটি যান্ত্রিক গোলযোগের কবলে পড়ে। বিমানটি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানালেও এরপর আর যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে আঙ্কারা থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে হায়মানা জেলার কেসিক্কাভাক গ্রামে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী দিবাইবাহ এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে জাতি ও সামরিক বাহিনীর জন্য এক বিশাল ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বিয়োগান্তক ঘটনায় জাতি এবং সামরিক প্রতিষ্ঠান গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এমন কিছু নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিকে হারিয়েছি, যারা দেশের জন্য সর্বদা নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে গেছেন।’

এই দুর্ঘটনায় সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ ছাড়াও লিবিয়ার স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতৌরি গারিবিল, সামরিক উৎপাদন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মাহমুদ আল-কাতাওয়ি, সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওয়ি দিয়াব এবং সামরিক আলোকচিত্রী মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিমানের তিনজন ক্রু সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮টা ১০ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং ৮টা ৫২ মিনিটে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তুরস্কের রাষ্ট্রপতির যোগাযোগ অধিদপ্তরের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান নিশ্চিত করেছেন যে, বিমানটি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের সংকেত পাঠিয়েছিল।

ঘটনার তদন্ত প্রসঙ্গে তুরস্কের আইনমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানান, আঙ্কারার প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করছে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে এবং দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রযুক্তিগত ত্রুটিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।’

আল-হাদ্দাদ তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার এবং সেনাপ্রধান সেলচুক বায়রাকতারোগ্লুসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে আঙ্কারায় গিয়েছিলেন। এই সফরে দুই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, তুরস্কের পার্লামেন্ট লিবিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার একদিন পরই এই দুর্ঘটনা ঘটল।

আল জাজিরার ত্রিপোলি প্রতিনিধি মালিক ট্রেইনা বলেন, ‘হাদ্দাদের মৃত্যু লিবিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করল। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সামরিক কর্মকর্তা, যিনি সব পক্ষের সম্মান অর্জন করেছিলেন। ২০১১ সালে গাদ্দাফি-বিরোধী বিদ্রোহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং কখনোই কোনো মিলিশিয়া গোষ্ঠীর পক্ষ নেননি।’