ট্রাম্প চাইলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন নেতানিয়াহু!

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা। ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একাংশের ধারণা, নেতানিয়াহু ইচ্ছে করেই শান্তি প্রক্রিয়া ধীরগতির করে দিচ্ছেন এবং যুদ্ধবিরতি দুর্বল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ‘ইনার সার্কেল’ বা ঘনিষ্ঠ বলয়ের সদস্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, শান্তিদূত স্টিভ উইটকফ এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস—সবাই নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে ‘ক্রমবর্ধমান হতাশা’ অনুভব করছেন। তারা মনে করছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন এবং প্রক্রিয়াটি ব্যাহত করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

তবে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এই ইস্যুতে উইটকফ ও কুশনারের তুলনায় মার্কো রুবিও নেতানিয়াহুর অবস্থানের কিছুটা কাছাকাছি রয়েছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, নেতানিয়াহু কার্যত ট্রাম্পের মূল উপদেষ্টা দলের সমর্থন হারিয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে চুক্তিটি দ্রুত এগিয়ে নিতে আগ্রহী এবং এই মুহূর্তে তিনিই নেতানিয়াহুর সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে পাশে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শান্তিদূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা, বিশেষ করে গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করার ধারণা নিয়ে নেতানিয়াহু স্পষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই নিরস্ত্রীকরণ প্রস্তাবটি বহুধাপের শান্তি পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান অংশ।

মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিরোধের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু সোমবার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্টকে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য রাজি করানোর পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা।

চুক্তির প্রথম ধাপটি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়, যেখানে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, এই ধাপে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ইসরায়েল পুরোপুরি রক্ষা করেনি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪১১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক হাজার ১১৮ জন আহত হয়েছেন।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গাজা পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী কারিগরি কমিটি গঠন, পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু, একটি শান্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা আরও প্রত্যাহার এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতিসংঘের হিসেবে, ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে প্রায় সাত হাজার কোটি (৭০ বিলিয়ন) ডলার ব্যয় হবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন এক লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ।