নজরুল ইসলাম: খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবেন না শেখ হাসিনা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কখনোই মুক্তি পেতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী নজরুল ইসলাম খান।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত খালেদা জিয়ার জানাজার আগে দলের পক্ষ থেকে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় অন্ধকার কারাগারে বন্দি থাকতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। কারাগারে থাকাকালীন উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটে।

তিনি আরও বলেন, দেশবাসী সাক্ষী, যিনি পায়ে হেঁটে কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়। পরবর্তী সময়ে চার বছরের গৃহবন্দিত্বে রেখে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের মতে, এই অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার ফলেই তার অসুস্থতা আরও বেড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত এই অপরাজেয় নেত্রী মৃত্যুর কাছে হার মানতে বাধ্য হন। তাই এই মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী হাসিনা কখনো মুক্তি পেতে পারে না।

এদিন বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেকের ইমামতিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা ২ মিনিটে জানাজা শুরু হয়ে শেষ হয় ৩টা ৫ মিনিটে।

জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধানসহ দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জানাজার প্রথম সারিতে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এ ছাড়া ৩২টি দেশের রাষ্ট্রদূত জানাজায় অংশ নেন। খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুমোদন ছাড়া কাউকে সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

জানাজাকে কেন্দ্র করে পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জাতীয় সংসদের মূল মাঠ দুটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে একদিকে বিজয় সরণি ও আগারগাঁও, অন্যদিকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে।

পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে প্রয়াত স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়াকে দাফন করা হয়। দাফনকার্যে পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে নিউমোনিয়া দেখা দেয়, সঙ্গে কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পুরোনো জটিলতা ছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়।