আপনি পড়ছেন

১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্ম নেয়া আব্দুল জব্বার প্রথম বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৫৮ সালে। চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন ১৯৬২ সালে এবং ১৯৬৪ সালে বিটিভি’র নিয়মিত শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতার পথে পথে গান গেয়ে ১২ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি। এছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে গণসংগীত গেয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

abdul jabbar

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬) লাভ করেন তিনি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩) ও সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-২০১১ (আজীবন সম্মাননা) পান।

তার গাওয়া ‘তুমি কী দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‌‌‌‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তার গাওয়া ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি নদীমাতৃক এই বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় সর্বত্র। যে শিল্পীর কণ্ঠে এমন কালজয়ী গান স্থান পায়, সে শিল্পীর মৃত্যু নেই, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। তাকে সালাম।

‘তুমি কি দেখেছ কভু’: ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’ গানটি লিখেছেন মনিরুজ্জামান। সুর করেছেন সত্য সাহা। ‘এতটুকু আশা (১৯৬৮)’ ছবিতে এ গানটি গেয়েছিলেন তিনি। বিখ্যাত শিল্পী হেমন্ত মুখার্জি এ গানটির শুনে শিল্পী আব্দুর জব্বারের প্রশংসা করেছিলেন।

‘‘তুমি কি দেখেছ কভু / জীবনের পরাজয়?/ দুঃখের দহনে, করুন রোদনে,/ তিলে তিলে তার ক্ষয়।।/ আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন/ মুকুলেই ঝরে যায়।/ শুকনো পাতার মর্মরে বাজে/ কত সুর বেদনায়।।/ আকাশে বাতাসে নিষ্ফল আশা/ হাহাকার হয়ে রয়।/ দুঃখের দহনে, করুন রোদনে,/ তিলে তিলে তার ক্ষয়।।/ প্রতিদিন কত খবর আসে যে/ কাগজের পাতা ভরে,/ জীবন পাতার অনেক খবর/ রয়ে যায় অগোচরে।।/ কেউ তো জানে না প্রাণের আকুতি/ বারে বারে সে কি চায়?/ স্বার্থের টানে প্রিয়জন কেন/ দূরে সরে চলে যায়।।/ ধরণীর বুকে পাশাপাশি তবু/ কেউ বুঝি কারো নয়।/ দুঃখের দহনে, করুন রোদনে,/ তিলে তিলে তার ক্ষয়।।’’

‘ও রে নীল দরিয়া’: এ গানটি লিখেছেন মুকুল চৌধুরী। সুর করেছিলেন আলম খান। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ ছবিতে এ গানটি গেয়েছিলেন আব্দুল জব্বার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায় এবং গানটিতে।

‘‘ওরে নীল দরিয়া/ আমায় দেরে দে ছাড়িয়া।/ বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি, হায়রে/ কান্দে রইয়া রইয়া।/ কাছের মানুষ দুরে থুইয়া,/ মরি আমি ধড়-ফড়াইয়া,রে।/ দারুন জ্বালা দিবানিশি।।/ অন্তরে অন্তরে।/ আমার এত সাধের মন বধূয়া/ হায়রে কি জানি কি করে।।/ ওরে সাম্পানের নাইয়া,/ আমায় দেরে দে ভিড়াইয়া।/ বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি, হায়রে/ কান্দে রইয়া রইয়া।/ ওরে সাম্পানের নাইয়া।/ হইয়া আমি দেশান্তরী/ দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী,রে।/ নোঙর ফেলি ঘাটে ঘাটে।।/ বন্দরে বন্দরে।/ আমার মনের নোঙর পইড়া আছে হায়রে/ সারেঙ বাড়ির ঘরে।/ এই না পথ ধইরা/ আমি কত না গেছি চইলা।/ একলা ঘরে মন মন বধূয়া আমার/ রইছে পন্থ চাইয়া।।’’

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’: আবদুল জব্বারের গাওয়া এ গানটির সুরকার তিনি নিজেই। গানটি কবিতা হিসেবে লিখেছিলেন ফজল-এ-খোদা। গানটি প্রথম বেতারে প্রচারিত হয় ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ।

সালাম সালাম হাজার সালাম/ সকল শহীদ স্মরণে,/ আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/ তাদের স্মৃতির চরণে।।/ মায়ের ভাষায় কথা বলাতে/ স্বাধীন আশায় পথ চলাতে/ হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ/ সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান/ তাদের বিজয় মরণে,/ আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/ তাদের স্মৃতির চরণে।।

ভাইয়ের বুকের রক্তে আজি/ রক্ত মশাল জ্বলে দিকে দিকে/ সংগ্রামী আজ মহাজনতা/ কন্ঠে তাদের নব বারতা/ শহীদ ভাইয়ের স্মরণে,/ আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/ তাদের স্মৃতির চরণে।।/ বাংলাদেশের লাখো বাঙালি/ জয়ের নেশায় আনে ফুলের ডালি/ আলোর দেয়ালি ঘরে ঘরে জ্বালি/ ঘুচিয়ে মনের আঁধার কালি।/ শহীদ স্মৃতি বরণে,/ আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/ তাদের স্মৃতির চরণে।।

জয় বাংলা বাংলার জয়: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান এই গানটির সুর করেছেন আনোয়ার পারভেজ, আর গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আব্দুল জব্বার এই গানটি ১৯৭১ সালে গেয়ে গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

জয় বাংলা বাংলার জয়, জয় বাংলা বাংলার জয়।।/ হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়,/ কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে/ নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।।/ জয় বাংলা বাংলার জয়, জয় বাংলা বাংলার জয়।।/ বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে চাই মোরা অন্নে।।/ আমাদের রক্ত টগবগ দুলছে মুক্তির দীপ্ত তারুণ্যে।।/ নেই ― ভয়/ জয় হউক রক্তের প্রচ্ছদ পট।/ তবু করি না করি না করি না ভয়।/ জয় বাংলা বাংলার জয়, জয় বাংলা বাংলার জয়।।

অশোকের ছায় যেন রাখালের বাঁশরী হয়ে গেছে একেবারে স্তব্ধ।।/ চারিদিকে শুনি আজ নিদারুণ হাহাকার আর ঐ কান্নার শব্দ।।/ শাসনের নামে চলে শোষণের সুকঠিন যন্ত্র।।/ বজ্রের হুঙ্কারে শৃঙ্খল ভাঙতে সংগ্রামী জনতা অতন্দ্র।/ আর ― নয়।/ তিলেতিলে বাংগালীর এই পরাজয়।।/ আর করি না করি না করি না ভয়।/ জয় বাংলা বাংলার জয়।।

ক্ষুধা আর বেকারের মিছিলটা যেন ঐ দিন দিন শুধু বেড়ে যাচ্ছে/ রোদে পুড়ে জলে ভিজে অসহায় হয়ে আজ ফুটপাতে তারা তাই কাঁদছে।।/ বার বার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবো নাতো আর ধান,/ বাংলার দুশমন তোষামদি চাটুকার সাবধান, সাবধান, সাবধান ।।/ এই দি—ন।/ সৃষ্টির উল্লাসে হবে রঙিন।।/ আর মানি না মানি না কোন সংশয়/ জয় বাংলা বাংলার জয়।।/ হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়/ কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে/ নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।।/ জয় বাংলা বাংলার জয়, জয় বাংলা বাংলার জয়।।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.