মুশফিকদের সামনে আরো বড় বিপদ

দশ বছরের পুরোনো লজ্জা সঙ্গী করে পচেফস্ট্রুম ছাড়ছে বাংলাদেশ দল। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হবে ব্লুমফন্টেইনে। যেখানে বাউন্সি উইকেটের দাবি জানিয়ে রেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। রাখার কথা বলেছেন ঘাসও। অর্থাৎ পচেফস্ট্রুমের তুলনায় মুশফিকদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে ব্লুমফন্টেইনে।

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছে পচেফস্ট্রুমের উইকেটের চরিত্র। প্রথাগতভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই পেসারদের দুর্দান্ত দাপটের মঞ্চ। বাংলাদেশ দলেও এই প্রথাগত চিন্তাটা ঢুকে পড়েছিলো ভূতের মতো। যেনো এর বাইরে আর কিছু হতেই পারে না।

প্রথার বাইরে যেতে না পারার দুর্বলতা থেকেই টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বসলেন মুশফিকুর রহিম। ফলাফল এলো মাঠে নামার পর। প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ালো এক উইকেটে ২৯৮ রান! যে একটা উইকেট পড়েছে, সেটাও রান আউটের দয়ায়।

উইকেট না পড়তে পারার অজ্ঞতা থেকেই ম্যাচ শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ৩৩৩ রানের বিশাল পরাজয়ে। পচেস্ট্রুমের এই বিপদ, মানে উইকেট না বুঝতে পারার বিভ্রান্তি থাকবে না ব্লুমফন্টেইনে। তাই বলে বিপদ যে কমছে, তা কিন্তু নয়। বরং সেখানে আছে এমন বিপদ, যার জন্য আসলে মুশফিকরা অপেক্ষাই করছিলেন!

দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন যেমন হয়, সেখানে পেসাররা যেমন সহায়তা পান, তার কিছুই ছিলো না প্রথম টেস্টের ভেন্যুতে। অথচ সেটা আশা করেই তিন পেসার নিয়ে এবং বাঁহাতি স্পিনার বাদ দিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলো বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।

উইকেট ও কন্ডিশন নিয়ে আশাহত হওয়ার ঘটনা ব্লুমফন্টেইনে ঘটবে না— এটা প্রায় নিশ্চিত। এমনিতেই সেখানকার কন্ডিশন দক্ষিণ আফ্রিকার আদর্শ কন্ডিশন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বাগতিক অধিনায়কের চাহিদা। অর্থাৎ এমনিতেই পেসারদের স্বপ্নের রাজ্য হয়ে থাকা ব্লুমফন্টেইনকে করে তোলা হচ্ছে আরো বেশি পেসারবান্ধব।

বাংলাদেশের উপমহাদেশের বাইরে যাওয়া মানেই পেসারদের সামনে খাবি খাওয়া। প্রথম টেস্টে মরনে মরকেল ও কাগিসো রাবাদার সামনে সেটা তেমন একটা খেতে হয়নি হয়নি মুশফিকদের। তাদের এক রকম বাঁচিয়ে দিয়েছে পচেফস্ট্রুমের উইকেট। কিন্তু উইকেটের এই বদন্যতা মিলবে না দ্বিতীয় টেস্টে। ৩৩৩ রানে হারের ক্ষত শুকিয়ে যাক বা না যাক, মুশফিকদের জন্য আসলে আরো বড় বিপদই অপেক্ষা করছে।

পেসারদের স্বর্গরাজ্য দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য দলের সেরা পেসারদের পাচ্ছে না। ডেল স্টেইন নেই। ভ্যারনন ফিল্যান্ডারও মাঠের বাইরে। গত ম্যাচের ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেছেন মরনে মরকেলও। কিন্তু কাগিসো রাবাদা আছেন। তাকে কেন্দ্র করেই মাঠে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ। তারপরও সেটা তাদের দ্বিতীয় সারির আক্রমণই হবে। সেই আক্রমণের বিরুদ্ধে খেলতে কতোটা প্রস্তুত মুশফিকরা?

অন্য দিকে প্রথম শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ ছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। ম্যাচ শেষে প্রকাশ্যে তাদের সমালোচনা করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাসকিন আহমেদর নামও উচ্চারণ করেছেন অধিনায়ক। ব্লুমফন্টেইনে অধিনায়কের এমন ক্ষোভের জবাব দেয়ারও একটা সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের পেসাররা।

প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের তামিমরা কতোটা ভালো করে সামলাতে পারবেন আর কেমন করবেন বাংলাদেশের পেসাররা; এই দুই প্রশ্নের উত্তর যতোটা পক্ষে আসবে, ততোই বিপদ কমবে বাংলাদেশের। না হলে পচেফস্ট্রুমের চেয়ে আরো করুণ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করাই শ্রেয়।