কী কী থাকছে সৌদির বিলাসবহুল মেগাসিটিতে...

প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার (৪০ লাখ কোটি টাকা) ব্যয়ে সৌদি আরবের মরুভূমি অঞ্চলে বিলাসবহুল মেগাসিটি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। জর্ডান এবং মিশর সীমান্তে লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগর কেন্দ্র করে সুয়েজ খাল সংলগ্ন সাড়ে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে NEOM (নিয়ম) নামের এ বিশাল মেগাসিটি নির্মাণ করা হবে। খবর রয়টার্স, আরব নিউজ ও ডেইলি সাবাহ।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর থেকেও প্রায় ৩৩ গুণ বড় হবে ওই মেগাসিটি। ২০৩০ সালের মধ্যে আলোচিত ওই মেগাসিটি নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে দেশটি এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এ ঘোষণার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বে চলছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। তবে নতুন মেগাসিটি নিয়মকে ঘিরে বিপুল সম্ভাবনা দেখছে সৌদি আরব।

সৌদি প্রিন্স বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, নিয়ম সিটি নির্মাণের পর তা সৌদি আরবের অর্থনীতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করবে। আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির মতই সব সুযোগ সুবিধা থাকবে ওই মেগাসিটিতে।’

ওই মেগাসিটি নির্মাণের পর দেশটিতে নতুন করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তেলনির্ভর অর্থনীতির এদেশে অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের জন্য ‘ডিসকোভারনিয়ম’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে নতুন মেগাসিটির বিস্তারিত বিবরণ। ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি হবে এমন এক শহর যেখানে এমন সব বিষয় থাকবে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও (একসঙ্গে) নেই।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ মেগাসিটিতে ‘স্বপ্নের শহর’ বলে অভিহিত করেছেন। কী থাকবে এই ‘স্বপ্নের’ এই শহরে? ওয়েবসাইট অবলম্বনে বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

বিনোদন: দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য থাকবে নজিরবিহীন সব ব্যবস্থা। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলের এ মেগাসিটিতে পৃথিবীর সেরা থিয়েটার, শপিং মল তো থাকছেই।

মিডিয়া: বিশ্বের সেরা সেরা স্টুডিও থাকবে নিয়ম সিটিতে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, হলিউড থেকে শুরু করে বিশ্বের সেরা পরিচালকরা তাদের ফিল্মের কাজ করতে ছুটে আসবেন NEOM-এ। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কোম্পানিগুলোর জন্যও নিয়ম হবে এক কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: তথ্য-প্রযুক্তির সর্বশেষ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য উপযোগী ল্যাব ও প্রতিষ্ঠান থাকবে ওই সিটিতে। বিশেষ করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ইত্যাদির ওপর উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে কিভাবে দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করা যায় তা নিয়ে কাজ করবেন গবেষকরা। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যত পৃথিবীর নতুন ধরনের নানা স্বাস্থসেবার যাত্রা শুরু হবে নিয়ম থেকে। বায়োটেকনোলজি গবেষণায় নতুন মাত্রা আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে, থাকবে একাধিক গবেষণাগার।

উৎপাদন কারখানা: খাবারের বাইরে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে আলাদা প্রজেক্ট থাকবে সেখানে। শুধু বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি নয়, সৌদি আরবে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে কাজ করবে এই শহর।

যোগাযোগের কেন্দ্র: নিয়ম হবে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র। বিমান, স্থল ও জলপথে বিশ্বের নানা প্রান্তে যাতায়াতের জন্য ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হবে এই লোহিত সাগরের তীরবর্তী এই শহর।

বিদ্যুৎ ও পানি: মরুভূমিতে পানির সংকট। আর পৃথিবীবাসী আগামীতে জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। এদিকে সৌদি আরবের তেলের রিজার্ভও ফুরিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় NEOM সিটি কাজ করবে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য। একই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে থাকবে নানা প্রকল্প।

খাবার: মরুভূমিতে পানির সংকটের পাশাপাশি খাবারেরও সংকট হয়। এ সমস্যা দূর করতে নিয়মে তৈরি করা হবে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপণ্য উৎপাদনযোগ্য পরিবেশ। মরুভূমিতে (বিশেষ প্রক্রিয়ায়) উৎপাদন করা হবে লাখ লাখ মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য।