নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র

পটুয়াখালীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জেলার পটুয়াখালীর পায়রায় ৩৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি নির্মাণে ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'পটুয়াখালির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মোট তিনটি ইউনিট থাকবে। এই তিন ইউনিট দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে মোট তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।'

জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি নির্ভর এই প্রকল্পটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন আসবে ঋণ থেকে। বাকি ৪০০ মিলিয়ন ডলার ইক্যুইটি হিসেবে থাকবে। বিদ্যুৎ ভবনে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খুরশীদ আলম এবং সিমেন্স সাউথ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুনীল মাথুর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, 'এটিই হবে বাংলাদেশে ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।'

সরকারের লক্ষ্য কম মূল্যে গ্রাহককে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, 'সরকার তার লক্ষ্যে অবিচল। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে সরকার বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে যাচ্ছে। এছাড়াও পটুয়াখালীর পায়রায় চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার। অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২৬ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ।'

বিদ্যুৎ প্রকল্পটির সহায়ক রাষ্ট্র জার্মানীর রাষ্ট্রদূত ড. টমাস প্রিনজ বলেন, 'রোহিঙ্গা ইস্যুতে জার্মানী বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। জার্মান সরকার বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হতে চায়। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম ক্রেতা জার্মান।'

জানা গেছে, নতুন এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য ১০০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। মোট তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সেখানে একটি সমুদ্র বন্দর করারও পরিকল্পনা করেছে সরকার। পরবর্তিতে যেটিকে গভীর সমুদ্র বন্দর করা হতে পারে। পায়রার আশেপাশে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। মূলত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতে শক্তিশালী হতে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভসহ) ১৫ হাজার ৮২১ মেগাওয়াট। সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি ৪০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০০৯ সাল থেকে সারাদেশে মোট নয় হাজার ২৫৪ মেগাওয়াটের ৮৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। সরকার বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। মহেশখালী ও বাগেরহাটে একাধিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

পিডিবি বলছে, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ২৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ৭,৩৭৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ৪১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। পাশাপাশি পরিকল্পনায় আছে নয় হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ১৪টি প্রকল্প।