‘গায়ে কাঁদা লাগছে না, অথচ সে কৃষক...’

প্রতি বছর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি মৌসুমে প্রায় একই সময় আবেদন করা এবং ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন শিক্ষার্থীরা। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ভোগান্তি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। সক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- এম.এস.আই খান।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষা’র জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ছুটতে হয় শিক্ষার্থীদের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে আবেদন করতেও অনেক টাকা গুনতে হয় তাদের। এই সমস্যার সমাধানে কি করা যেতে পারে?

সৌমিত্র শেখর: প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটতে হয়। এটা আসলেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ভোগান্তিকর। ছাত্রীদের জন্য এটা আরো বেশি ভোগান্তিকর। এই সমস্যার সমাধানে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার:  সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান র‌্যাঙ্কিং কিভাবে হবে? 

সৌমিত্র শেখর: সমন্বিত পরীক্ষার যে উদ্যেগ নেয়া হয়েছিল সেটিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। প্রথমত, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তার একটা মেরিট লিস্ট প্রকাশ করে শিক্ষার্থীর পছন্দের জায়গা তৈরি করা। শিক্ষার্থীদের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দের জন্যও একটা অনলাইন আবেদন থাকতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ পূরণ না হলে পরবর্তী পছন্দের জায়গায় চলে যাবে। আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হল সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কি নির্ধারণ করে দিবে ইউজিসি।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিষয় নেই, ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিষয়গুলো কিভাবে পাবে? 

সৌমিত্র শেখর: শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয়গুলোতে সুযোগ দেওয়ারও একটা ব্যবস্থা রাখাতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই বিষয় ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিষয় মান যাচাই নিয়েও একটা প্রশ্ন চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়টিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে সেটাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বলে রাজনীতি বিজ্ঞান, আবার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বলে সরকার ও রাজনীতি! এ বিষয়গুলো মোটামুটি একই, পার্থক্য খুবই সামান্য। বিভাগ নিয়ে এমন সমস্যা মেডিকেল বা ইঞ্জিয়ারিং এর ক্ষেত্রে তেমন হয় না। নাম যাই থাকুক না কেন এ বিষয়গুলোকে সমমানের করার উদ্যোগ নেয়া উচিত ইউজিস’র (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন)।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা মোটামুটি ৬০ হাজারের মত। এ বিষয়ে কি বলবেন?

সৌমিত্র শেখর: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষা বাড়ানোর খুব বেশি প্রয়োজন নেই। কারিগরি শিক্ষাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলা উচিত। কারণ সাধারণ শিক্ষা দিয়ে বছর বছর বেকার উৎপাদন করে জাতীর সমস্যা আরো বাড়ছে। আমি সম্প্রতি রাশিয়া সফর করে আসলাম, সেখানে আমাদের মত সাধারণ শিক্ষা এত জনপ্রিয় না। সেখানে কারিগরি শিক্ষাই মূল ধারার শিক্ষা। সে কৃষক অথচ তার গায়ে কাঁদা লাগছে না। প্যান্ট, শার্ট পড়ে সে কৃষি কাজ করছে! এই যে ধারণাটা এই ধারণাটা আমাদের দেশে প্রয়োগ ঘটানো উচিত এবং কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়ানো উচিত।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সৌমিত্র শেখর: আপনাকে এবং পাঠকদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।