বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক পৃথক ভর্তি প্রক্রিয়া, দিশেহারা শিক্ষার্থীরা

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া কম খরচে ভাল মানের শিক্ষার এ সুযোগ পেতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের প্রথম পছন্দ থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের খরচ গুনতেই হিমশিম খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, ছয়টি এমনকি এর চেয়েও বেশি অনুষদ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিট বা বিভাগে আবেদন করতে পারেন। প্রতিটি ইউনিটে আবেদন করতে ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে একাধিক ইউনিট এবং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জিপিএ পাঁচ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৫৩৫ এবং ছাত্রী ১৭ হাজার ৪৩৪ জন। এছাড়া জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে রয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৭, জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থেকে ৩ এর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭৮। এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ হবেন গতবার যারা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি অথবা হননি।

এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আগ্রহী। কিন্তু দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে ৩৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি। ফলে বিপুল পরিমাণ এই শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন নিশ্চিত করতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা,  ফাইল ছবি।

অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় একই সময় ভর্তির আবেদন শুরু হওয়া ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিটে আবেদন করার নিয়ম চালু থাকায় আর্থিক সংকটের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদন করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তিন থেকে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে থাকেন। আর এতেই তাদের খরচ হয়ে যায় অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন না তারা।

ঢাকা কলেজ থেকে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজ পেপারকে বলেন, ‘৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদাভাবে আবেদন করা কোন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্তত আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। আর এই ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আবেদন করলে হয় না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিট। যার ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আবেদন করতে পারিনি।’

ভর্তিচ্ছু অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুধু আবেদন করতেই অনেক টাকা চলে যায়। আর আবেদন করার পরে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় দৌঁড়ানোটা যে কত কষ্টের আর ভোগান্তির তা বলে বুঝানো সম্ভব না। আর প্রথম দুই একটায় পরীক্ষা দিয়েও যখন চান্স হয় না। তখন প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হয়। মেডিকেলের মত একটি পরীক্ষার মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা নিলে হয়ত এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না।’