জেরুজালেম ইস্যু: বিশাল ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জেরুজালেমকে একতরফাভাবে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির ঘোষণাকে বিশাল ব্যবধানে প্রত্যাখ্যান করেছে সদস্য দেশগুলো। অধিবেশনে ১২৮- ০৯ ভোট ব্যবধানে মার্কিন নীতিকে প্রত্যাখ্যান করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার এ ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাত্র ৩৫ জন ভোট দানে বিরত ছিলেন। ১৯৩ জাতি দেশের এই অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দানের বিষয়ে সতর্কবর্তা দিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেছিলেন, ‘লাখ লাখ, কোটি, কোটি ডলার সাহায্য নেয়া সত্ত্বেও যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দেবে তাদের আর্থিক সাহায্য কমিয়ে দেয়া হবে। এতে প্রচুর মার্কিন ডলার সঞ্চয় করা সম্ভব হবে! কিন্তু ভোটের ফলাফল যেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালের দেয়া চিঠি এবং ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি দুটোকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভোটের আগে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পের হুমকির কাছে মাথা নত না করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। ভোটের পরে মুসলিম বিশ্ব এ ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ ভোটাভুটির এই ফলের প্রশংসা করে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব সমর্থনকারী দেশগুলোকে যে হুমকি দিয়েছিলেন তার যথাযথ জবাব হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছেন, ‘আমরা আনন্দের সাথে আল-আকসা নিয়ে জাতিসংঘের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা করি এই অপ্রত্যাশিত এবং অবৈধ সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করে নেবেন।’

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘকে ‘মিথ্যার বেসাতি’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘তারা ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করবেন।’ আর ইসরায়েলের প্রতি পূর্বের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ভোটের ফলাফলের পর জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, ‘আমেরিকা অবশ্যই জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করবে। কারণ আমেরিকান জনগণ এটাই চায়। এটাই ঠিক, জাতিসংঘের কোন ভোটাভুটি এটিকে পাল্টাতে পারবে না।’

ফিলিস্তিনের আহ্বানে তুরস্ক আর ইয়েমেনের উপস্থাপিত ওই প্রস্তাবে জেরুজালেম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে সেখানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ১২৮টি দেশ। এর মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চার স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া রয়েছে।

অন্যদিকে বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ৯টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ ও টোগো। আর ভোটদানে বিরত ছিল ৩৫টি দেশ।

ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-আর্জেন্টিনা, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, এন্টিগুয়া-বারমুডা, বাহামাস, বেনিন, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, ক্যামেরুন, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডোমিনিক্যান প্রজাতন্ত্র, ইকুইটোরিয়াল গিনি, ফিজি, জ্যামাইকা, কিরিবাতি, লাটভিয়া, লেসেথো, মালাউয়ি, পানামা, প্যারাগুয়ে, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ সুদান, ত্রিনিদাদ-টোবাগো, টুভ্যালু, উগান্ডা, ভানুয়াতি, হাইতি ও হাঙ্গেরি।