২০ বছর আগের সেই অভ্যুত্থানে জড়িতদের সাজা চায় তুরস্ক!

তুরস্কের নাজিমুদ্দীন এরবাকান সরকারকে পদচ্যুত করার ঘটনায় তৎকালীন দুই জেনারেলের যাবজ্জীবন শাস্তির দাবি করেছে তুরস্কের এক প্রসিকিউটর। বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে এ দাবি জানান।

১৯৯৭ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইসলামপন্থী সরকারকে বিশেষ কৌশলে পদচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে তুর্কি সেনাবাহিনী। ওই সেনা অভ্যুত্থান ‘পোস্ট মডার্ন ক্যু’ হিসেবে পরিচিত।

তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম ইয়ানি শাফাক জানায়, নাজিমুদ্দীন এরবাকান সরকারকে উৎখাতের ঘটনায় তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ ইসমাঈল হাক্কি কারাদায়ি ও ডেপুটি চিফ অব জেনারেল স্টাফ চেভিক বীরসহ সন্দেহভাজন ৬০ ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তুরস্কের এক প্রসিকিউটর। ওই মামলায় ১০৩ জন সন্দেহভাজন হিসেবে রয়েছেন। অভিযুক্ত দুই জেনারেল বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

এরবাকানকে যেভাবে উৎখাত করা হয়: ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন আরবাকান সরকারকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে। পদচ্যুতের আগে মুসলিম নারীদের মাথায় স্কার্ফ পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও কুরআন শিক্ষার মক্তব নিষিদ্ধ করতে ইসলামপন্থী এরবাকানকে জোর করে বাধ্য করে সেনাবাহিনী। পরে এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার দল রেফাহ বা কল্যাণ পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে এরবাকানকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরদোয়ান যেভাবে ক্ষমতায় আসে: একেপি ২০০১ এর ২০ জুলাই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সাদাত পার্টির যাত্রা শুরু করেন। বিপরীতে এরবাকানের দলের তরুণ নেতা এরদোয়ান ও আব্দুল্লাহ গুল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি বা ‘একে পার্টি’ গঠন করেন।

২০০২ সালে এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি দেশটির ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই দেশটির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর নাক গলানোর বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এরদোয়ান-গুলের কাঁধে এরবাকানের লাশ: ২০১১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন নাজিমুদ্দীন এরবাকান। ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় উপস্থিত হয়। তার দুই ছাত্র তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল তার লাশ বহন করেন। এছাড়াও এরবাকানকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করা হয়।

সেনা কর্মকর্তাদের বিচার শুরু: পরে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের দায়ে ২০১৩ সালে ওই ঘটনার বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করে এরদোয়ান সরকার। ১০৩ জনের বিরুদ্ধে এ বিচার শুরু হয়; যাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাক্তন জেনারেল। ১৩০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে সরকার উৎখাতে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

সূত্র: ইয়াহু নিউজ ও ইয়ানা শাফাক