বৃটেনের মন্ত্রিসভায় প্রথম মুসলিম নারী নুসরাত

বৃটেনের মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছেন এক মুসলিম নারী। নুসরাত গনি নামের ৪৫ বছর বয়সী এ নারী তেরেসা মের মন্ত্রিসভায় পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের বংশোদ্ভূত এ নারী ২০১৫ সাল থেকে দেশটির ওয়েলডিং এলাকার নির্বাচিত এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খবর স্কাই নিউজ, বিবিসি, মিরর ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

বিবিসি জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর শুক্রবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে নুসরাত প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসাবে ভাষণ দেন। হাউস অব কমন্সে ভাষণের পর ঐতিহাসিক মুহূর্তে টুইট বার্তায় নুসরাত লেখেন, ‘পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে আমার যাত্রা শুরু করলাম। বৃটেনের প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসও গড়ে ফেললাম। এজন্য আমার সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

বৃটেনের সংবাদ মাধ্যম মিরর জানায়, পাকিস্তানের বংশদ্ভুত নারী নুসরাত গনিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এক টুইটবার্তায় নুসরাতকে অভিনন্দন জানিয়ে তেরেসা মে লেখেন, ‘ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে নুসরাতকে অভিনন্দন। সে তার বিভাগে খুব ভালো করবে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আরও বলেন, ‘অনেক নাগরিকই জানেন, এ বছর আমাদের দেশ নারীদের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী, তরুণ প্রজন্ম তাদের পটভূমি, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের নির্বিশেষে এমন নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করবে। যেখানে আপনি কোথা থেকে এসেছেন তা বড় কথা নয়, বরং কে দেশের স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে কতটা ভূমিকা রাখছে তাই হবে মুখ্য বিষয়।’ 

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় নুসরাত গনি টুইটবার্তায় বলেন, ‘আমার কাছে এ দায়িত্বটা খুব আনন্দের; আবার চ্যালেঞ্জিংও। পরিবহণ আমার খুব প্রিয় বিষয়। ওয়েলডিন থেকে এমপি হওয়ার জন্য প্রচারের সময় থেকেই আমি পরিবহণের উন্নতির দাবি জানিয়ে আসছি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণেও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন নুসরাত।

বেড়ে ওঠার গল্প: ১৯৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন নুসরাত গনি। তার বাবা ও মা ছিলেন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরের নাগরিক। সেখান থেকে তারা বৃটেনের বার্মিংহামে পাড়ি জমান। নুসরাতের বেড়ে ওঠা বার্মিংহামেই। তিনি বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ও লীড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

বিবিসিতে সাংবাদিকতা: পড়াশোনা শেষে তিনি সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি এইজ ইউকে ও ব্রেকথ্রো ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানেও চাকরি করেন।

রাজনীতিতে নুসরাত: ২০১০ সালে বার্মিংহামের লেডিউড থেকে এমপি পদে প্রথমবার নির্বাচন করেন। ২০১৫ সালে সাসেক্সের ওয়েলডিন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রথম মুসলিম নারী এমপি হওয়ার রেকর্ড গড়েন। তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ১২তম নির্বাচিত এমপি। ২০১৭ সালে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বৃটিশ পার্লামেন্টে তাঁর মাকে সম্মান জানিয়ে মায়ের মাতৃভাষা উর্দুতে শপথ নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন। ২০১৮ সালে তিনি হাউজ অব কমেন্সে প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।

সূত্র: স্কাই নিউজ, বিবিসি, মিরর ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট