পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর একটি সুইডেন। ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর ৬টি শাখাতে অবদানের জন্য যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়, তার ঘোষণাটি আসে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান এই দেশ থেকে। দেশটি বিশ্বে পরিচিত তাদের ফুটবল প্রেমের জন্যও। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর থেকেই দেশটি অংশগ্রহণ করে আসছে। এ নিয়ে ১২ টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে সুইডিশরা।

sweden football team 2018

শিরোপা বঞ্চিত থাকলেও বিশ্বকাপে তাদের সাফল্যের গল্পটা অত্যন্ত রঙিন। টুর্নামেন্টে নিজেদের শ্রেষ্ঠ সাফল্য বলতে একবার রানার্সআপ হওয়া। কিন্তু এই পরিসংখ্যান দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না সুইডিশদের ফুটবল কীর্তিকথা। বিশ্বকাপে ফেয়ার প্লের জন্য ইতোমধ্যে দলটি সুনাম কুড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ল্যাটিন কিংবা ইউরোপের যত শক্তিশালী দলই আসুক না কেন সুইডেনকে সমীহ করতে হবেই।

নিজেদের দিনে যেকোন দলকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ইতিহাসটা তাদের বহু পুরনো। ফুটবল ইতিহাসে অলৌকিক যে কয়েকটা প্রত্যাবর্তন আছে তন্মধ্যে নাম আছে সুইডেনেরও। কয়েক বছর আগে দ্বিতীয়ার্ধে চার গোলে পিছিয়ে থাকার পরও জার্মানদের নিশ্চিত জয়বঞ্চিত করেছিল তারা। দলটির সাহসিকতা বোঝাতে ওই একটা ম্যাচই যথেষ্ঠ।

সুইডিশরা ফিফার আমন্ত্রণ পেলেও প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি। তবে পরের আসরে এসেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় দেশটি। অভিষেক ম্যাচেই রানার্সআপ আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় ৩-২ গোলে। সেবার জার্মানির বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ঘরে ফিরে সুইডেন। এরপর পরের দুই আসরে আরো বড় সাফল্য পায় তারা। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে চতুর্থ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান দখল করে। কিন্তু বাছাইপর্ব পার হতে না পারায় ১৯৫৪ বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের।

১৯৫৮ বিশ্বকাপের আসরটি সুইডেন আয়োজন করে নিজেদের ঘরে। তখন তাদের সামনে ছিল শিরোপা খরা ঘোচানোর মোক্ষম সুযোগ। সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে সফলভাবে এগিয়েও যায় তারা। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের বিপক্ষে। দুই দলের সামনে তখন প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন।

কিন্তু স্বাগতিক হওয়ার সুফলের ফসলটি তুলতে পারেনি সুইডিশরা। হেরে যায় ৫-২ গোলের ব্যবধানে। এরপর থেকেই শুরু হয় সেলেকাওদের রাজত্ব। এই শিরোপা খোয়ানোর হতাশাটা সুইডিশদের ভুগিয়েছে আট বছর। হয়তো যার কারণে তাদের দুই আসর দর্শকের ভূমিকা পালন করতে হয়।

সুইডেন পুণরায় বিশ্বমঞ্চে ফেরে ১৯৭০ সালে। কিন্তু কোনো আসরেই তারা হারানো ঐতিহ্যকে তুলে আনতে পারেনি। উল্টো থাকতে হয় আসা-যাওয়ার মাঝে। তবে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে বলার মতো আরেকটি চমৎকার গল্পের জন্ম দেয় দেশটি। কিন্তু ফাইনালে যাওয়ার পথে এবারও তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পূর্ব শত্রু ব্রাজিল। সেমিফাইনালে রোমারিওর একমাত্র গোলে আরেকবার হৃদয়ভাঙার বেদনা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয় সুইডিশদের।

গত দুই বিশ্বকাপে খেলতে না পারার দুঃখ ঘুচিয়ে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলবে দেশটি। ফেরার মঞ্চে গ্রুপপর্বেই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে সুইডিশদের। ‘এফ’ গ্রুপে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়াকে। এই বিশ্বকাপের আট গ্রুপের মধ্যে এই গ্রুপটাকেই বলা হচ্ছে মৃত্যুকূপ।

রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইডেন খেলবে স্বদেশী কোচ জেন অ্যান্ডারসনের অধীনে। তবে এবার দেশটির সেরা তারকা ফুটবলার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিকে ছাড়াই বিশ্বকাপে খেলবে সুইডিশরা। ইব্রা কেবল সুইডেনের নয়, বিশ্ব ফুটবলেরও শ্রেষ্ঠ তারকাদের একজন। এই কিংবদন্তি ফুটবলার অবসর ভেঙে বিশ্বকাপ খেলার আগ্রহ দেখালেও দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের চাপের কারণে জায়গা পাননি চূড়ান্ত দলে।

২০১৬ ইউরো কাপের পর জাতীয় দল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। পরবর্তীতে ইব্রাকে ছাড়াই ইউরোপের বাছাইপর্ব পার হয়েছে অ্যান্ডারসনের শিষ্যদের। সেই সুবাদে দলের ভারসাম্য নষ্ট হবে এমন সিদ্ধান্তের অজুহাতে দলে ফিরতে পারেননি এলএ গ্যালাক্সির এই ফরওয়ার্ড।

ইব্রার অবর্তমানে মাঠে দলটির প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন মার্কাস বার্গ। ইব্রা অধ্যায়ের পর সুইডেনের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ৩১ বছর বয়সী ফরওয়ার্ড। সুইডেনকে বাছাইপর্ব পার করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা তিনিই রেখেছেন। ১১ ম্যাচে করেছেন ১৬ গোল। এবার মূলপর্বে সুইডিশদের আশা দেখাচ্ছেন মার্কাস বার্গ।

অবশ্য বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে প্রস্তুতিপর্বটা ভালো হয়নি অ্যান্ডারসনের দলের। শেষ চার প্রীতি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে তারা। আর হারতে হয়েছে চিলির বিপক্ষে। তবে রাশিয়ায় নিজেদের প্রতিভার প্রমাণ দিতে বদ্ধপরিকর দলটি। শিরোপার দিকে চোখ রেখে সুইডেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলবে ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.