ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে বিভক্ত হয়ে যায় গোটা বিশ্ব। ফুটবলপ্রেমী বাঙালিও বিভক্ত হয়ে পড়ে দুই ভাগে। হওয়ারই কথা। কারণ দেশ দুটি বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি। দুই দলের ফুটবল দ্বৈরথটাও বহু পুরনো। বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের দিক দিয়ে ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে আর্জেন্টিনার অবস্থান।

argentina football team 2018

আর্জেন্টিনার মাটি যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য ফুটবল কিংবদন্তির। প্রতিভার জন্য কখনো তাদের অপেক্ষা করতে হয়নি। আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো, সিজার লুইস মেনোত্তি, কার্লোস বিলার্দো, দিয়েগো ম্যারাডোনা, ক্লদিও ক্যানিজিয়া, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, মারিও ক্যাম্পেস, ফেলিক্স লোস্তাউরদের মতো তারকারা একসময় ছিলেন প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন লিওনেল মেসি, হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো, সার্জিও অ্যাগুয়েরো, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, পাওলো দিবালাদের মতো ফুটবলাররা।

বিশ্বকাপের জন্মলগ্ন থেকেই ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে লা আলবিসেলেস্তেরা। বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই রানার্সআপ হয়েছিল দেশটি। সেই থেকে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। তবে পরের আসরে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখে ঘরে ফিরে তারা। এরপর টানা তিন আসরে অংশগ্রহণ করেনি আর্জেন্টিনা। মাঝখানে বাছাইপর্ব পার হতে না পারায় ১৯৭০ বিশ্বকাপ ছাড়া প্রত্যেকটি আসরে অংশগ্রহণ করেছে আকাশি-নীলরা।

প্রথম আসরের ফাইনালিস্ট দলটিকে বিশ্বকাপ জিততে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ চার যুগ। সেই অপেক্ষার অবসান তারা ঘটায় ১৯৭৮ বিশ্বকাপে। সেবার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ গ্রহণ নেয় স্বাগতিক আর্জেন্টিনা। তবে আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সবচেয়ে সোনালি প্রজন্মটা ছিল ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে।

ওই আসরেই বিশ্ব ফুটবলে উত্থান হয় একজন মহানায়কের। যার একক নৈপুণ্যে ইউরোপ পরাশক্তি জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলে দেশটি। তখন থেকেই মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার নাম হয়ে ওঠেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। বিশ্ব ফুটবলের এই মহারথী পরের বিশ্বকাপেও একক জাদুতে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। কিন্তু এবার পশ্চিম জার্মানির প্রতিশোধের শিকার হয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।

ফাইনালে ১-০ গোলে হেরে টানা দ্বিতীয় শিরোপা হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হোন ফুটবলের এই রাজপুত্র। কিন্তু এই কলঙ্কতেও ম্যারাডোনার জনপ্রিয়তায় কখনো ভাটা পড়েনি। কারণ খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি যা দিয়ে গেছেন তা ম্লান করতে পারবে না কোনো কিছুই।

ছিয়াশির পর আর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। অপেক্ষাটা বেড়েছে গাণিতিক হারে। তবে গত আসরে আর্জেন্টিনাকে শিরোপার খুব কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরী মেসি। কিন্তু মারাকানার ফাইনালে সেই জার্মানির কাছেই ফের স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। মারিও গোটশের শেষ মুহূর্তের গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। এই দুই ফাইনালের মাঝে জার্মানদের সঙ্গে যে ক’বার সাক্ষাৎ হয়েছিল আর্জেন্টাইনদের, প্রতিবারই এই দলটার কাছে থেমে গিয়িছিল তাদের স্বপ্নযাত্রা।

বিশ্বকাপের শিরোপাটা দুইয়ের ঘরে থাকলেও ল্যাটিন আমেরিকা প্রতিযোগিতায় তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। মোট ১৪ বার কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা। সংখ্যাটা আরো দুই বাড়তে পারতো। কিন্তু মেসি অ্যান্ড কোং কোপা আমেরিকার ব্যাক টুক ব্যাক ফাইনালে হেরে গেছে চিলির কাছে। ফিফার অন্য আরেকটা টুর্নামেন্ট কনফেডারেশনস কাপ জয়ের কৃতিত্ব আছে আর্জেন্টিনার।

রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খেলবে কোচ জর্জ সাম্পাওলির অধীনে। তবে বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে কপালে ভাঁজ টেনে থাকতে হচ্ছে তাকে। কারণ গোলবারের নিচে প্রধান ভরসা সার্জিও রোমেরো ছিটকে গেছেন বিশ্বকাপকে নাগের ডগায় এনে।

তবে প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছে আর্জেন্টিনার। শেষ তিনটি প্রীতি ম্যাচের দুটোতেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তের গেল মার্চের শেষ সপ্তাহের হারটা বারবার সামনে চলে আসছে তাদের সামনে। মাদ্রিদের প্রীতি ম্যচে স্পেনের কাছে ৬-১ গোলে উড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ধাক্কাটা অবশ্য হাইতিকে উড়িয়ে কিছুটা হলেও সামলে নিয়েছে সাম্পাওলির দল। কিন্তু বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা আর খেলতে পারেননি মেসি-ডি মারিয়ারা। রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে বহুল আলোচিত ইসরায়েলের সাথে ম্যাচটা বাতিল করে দেয় আর্জেন্টিনা।

এবারো আর্জেন্টিনা স্বপ্ন দেখছে মেসিকে ঘিরে। কারণ আর্জেন্টাইনরা জানেন, মেসি ছাড়া বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব। দলটির প্রাণভোমরাও তিনি। এই মুহূর্তে মেসি কেবল আর্জেন্টিনার নয়, বিশ্ব ফুটবলেরও সেরা দুজন শ্রেষ্ঠ তারকার একজন। গত মৌসুমেই বার্সেলোনার জার্সিতে ৩২ গোল করে তিনি জিতেছেন গোল্ডেন বুট।

ফুটবলপ্রেমীদের কাছে তিনি খুদে জাদুকর নামেও পরিচিত। গত আসরে দলকে ফাইনালে তুলে জিতেছিলেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। আর্জেন্টিনাও বাছাইপর্বে তাদের বিশ্বকাপ শঙ্কা দূর করেছে তার অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিকের সুবাদে। ইকুয়েডর ম্যাচের ফর্মটা বিশ্বকাপেও বয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন মেসি। নিজের ও দেশের স্বপ্নপূরণের এই যাত্রা বার্সেলোনা কাণ্ডারি পাচ্ছেন অ্যাগুয়েরো, হিগুয়েন, ডি মারিয়া, মাশ্চেরানোর মতো বিশ্বমানের সতীর্থদের।

তবে স্পেন ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে আর্জেন্টিনার। তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হয়ে উঠেছে রক্ষণভাগ। মাদ্রিদ ম্যাচই যেটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ ছাড়া সাম্পাওলি বিশ্বকাপে পাচ্ছেন না সেরা গোলরক্ষক রোমেরোকে। চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল লানঝিনি। যা আর্জেন্টাইনদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

মেসিকে ঘিরে ৩২ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর লক্ষ্যে আর্জেন্টিনা ১৬ জুন স্পার্তাক স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে তারা খেলবে নবাগত আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। ‘ডি’গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া। তবে শক্তিমত্তার বিচারে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই নক আউট পর্বে ওঠার কথা ল্যাটিন জায়ান্টদের। কিন্তু প্রত্যাশার কোনো চাপ নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নারাজ মেসি। কাঁধ থেকে চাপ ফেলে দিতে নিজেদের ফেভারিটের কাতারেও রাখছেন না অধিনায়ক মেসি।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.