সৌম্যর যে সেঞ্চুরিতে আনন্দ-বেদনা মিলেমিশে একাকার

জিম্বাবুয়ের মতো ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি, সেটাও আবার প্রস্তুতি ম্যাচের মতো প্রায় গুরুত্বহীন উপলক্ষ্যে; বিকেএসপিতে করা সেঞ্চুরিটি তাই খুব বেশি মনে থাকার কথা নয় সৌম্য সরকারের। আসলেই কি তাই? নানা কারণে এই সেঞ্চুরিই যে সৌম্যর মনোজগতে ছড়িয়ে দিচ্ছে আনন্দের হিল্লোল। যদিও এর উল্টো পিঠেই আবার আছে বিষাদের ধুসর ছায়। আসলে শুক্রবার সৌম্যর করা সেঞ্চুরিটি এমনই আনন্দ-বেদনায় একাকার।

বাংলাদশের সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই জাতীয় দলের সৌম্যর জায়গাটা বড্ড নড়বড়ে। সেই সফরে ভালো কিছু করতে পারেননি। যার মূল্য তাকে দিতে হয় ওয়ানডে দল থেকে সরে গিয়ে। টেস্টে তো জায়গা কখনো পাকা ছিলোই না। একটু সুযোগ কেবল ঝুলে ছিলো টি-টোয়েন্টিতে। সেখানেও দিনে দিনে সৌম্য হয়ে উঠছিলেন ম্লান আলোর বাতি।

এশিয়া কাপে হঠাৎ করেই সৌম্যর সামনে ডাক আসে। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বিপর্যয়ের মুখে ৩৩ রান করলেও তা ছিলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পরিস্থিতি ক্রমেই চলে যাচ্ছিলো সৌম্যর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সৌম্য দারুণ ধাক্কা খান, যখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দল থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।

এতো সব ধাক্কা সামলে সৌম্য দুর্বার হয়ে উঠেন জাতীয় লিগে। যেখানে তিন রাউন্ডের পাঁচ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে এক সেঞ্চুরি ও দুই হাফ সেঞ্চুরি। এই পারফর্মই তাকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের দলে বিবেচনা করতে বাধ্য করে। বৃহস্পতিবার খুলনায় জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলেই সে দিন রাতে ঢাকায় আসেন সৌম্য। চলে যান বিকেএসপিতে এবং এক শরীর ক্লান্তি নিয়ে সেখানেই হাঁকান অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। সৌম্যর মনে তাই আনন্দের বন্যা বয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ভাবছেন অন্যভাবে।

‘বিশেষ কোনো চিন্তা করিনি। এখানে ভালো কলে স্বস্তি পাবো, এমন ভাবনও ছিলো না। আমি খেলছিলাম জাতীয় লিগে। সেখান থেকে এসে অন্য একটা ফরম্যাটে এখানে খেলা; চেষ্টা ছিল উইকেটে থাকার। দেখতে চেয়েছিলাম কতক্ষণ উইকেটে থাকতে পারি। আজকে সুযোগই তেমন ছিলো।’

মুখ ফুটে না বললেও এই সেঞ্চুরি সৌম্যকে স্বস্তি না দিয়ে পারেই না। এই স্বস্তি পেতে অবশ্য তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে অনেক কিছু। চার পাঁচ বছর এবারই প্রথমবার দূর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতার দিনে ছুটি পেয়েছিলেন তিনি। সাতক্ষীরার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পূজা উদযাপনের পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এই খেলার জন্য তা পারেননি। এতেও অবশ্য আফসোস নেই তার।

‘এই সেঞ্চুরিটা একটা কারণে বিশেষ কিছু। বিশেষ কিছু করতে হলে অনেক ত্যাগও করতে হয়। প্রথমে তো এই খেলা আছে জানতাম না। খুলনাতেই ছিলাম, পরিকল্পনা ছিলো বাড়িতে যাব। হঠাৎ করে যখন বলা হল খেলতে হবে, প্রথমে একটু খারাপ লেগেছিলো। অনেক দিন পর একটা ছুটি পেয়েছিলাম সেটাও মিস হলো। আবার চিন্তা করলাম, যেহেতু খেলতেই হবে এসব চিন্তা না করাই ভালো। মনোযোগ দিয়ে খেলাই ভালো। সেই চেষ্টাই করেছি।’

সৌম্যর চেষ্টাটা দারুণভাবে সফল হয়েছে। এক দিন আগে জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস বলেছিলেন যে, ওয়ানডে দলে না থাকলেও বিশ্বকাপের চিন্তায় সৌম্য খুব ভালোভাবেই আছেন। বিকেএসপিতে চোখের সামনে সৌম্যকে সেঞ্চুরি করতে দেখে, কোচ নিশ্চয় মনে মনে ভেবেছেন, যাক বিশ্বকাপের চিন্তায় সৌম্যকে রাখাটা ভুল হচ্ছে না!